শাহ মতিন টিপু : আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ৮৭তম জন্মদিন আজ। শামসুর রাহমানকে বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকে পাঁচ মহান কবির পর (জীবনানন্দ দাস, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাধ দত্ত, অমীয় চক্রবর্তী এবং বিষ্ণু দে) আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখন পর্যন্ত তার সমপর্যায়ের আসনটি কেউ দখল নিতে পারেনি। আজও তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি।
এ কবির কবিতায় শুধু স্বাধীনতাই নয়, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, প্রেম, দ্রোহ ও বিশ্বজনীনতা সবই উঠে এসেছে। যা আজও আমাদের উজ্জীবিত করে। এ কারণে তিনি বাঙালীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের একজন এবং আমাদের চলার পথের পাথেয়।
পঞ্চাশ দশক থেকে বাঙালি জাতির নানা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, সামাজিক জীবনের অসংগতি, বৃটিশ ও পশ্চিমাদের শোষণের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার কণ্ঠ কবিতায় নির্মিত হয় এক অনন্য বাক-প্রতিমা। এ জন্যে তাকে স্বাধীনতার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার শক্তিমান কবি। তিনি কবিতাকে একালে জনপ্রিয় করে তোলেন। তাকে বলা হয়, আধুনিক বাংলা কবিতার ‘বরপুত্র’।
শামসুর রাহমানের কবি প্রতিভা কতখানি তা অনুমানে ‘স্বাধীনতা তুমি’ এই একটি কবিতাই যথেষ্ট। স্বাধীনতা তুমি / রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।/ স্বাধীনতা তুমি/ কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো / মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা- / স্বাধীনতা তুমি / শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্র“য়ারির উজ্জ্বল সভা / স্বাধীনতা তুমি / পতাকা-শোভিত স্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।.. কবিতার প্রতি লাইনে লাইনে প্রাণে যে ঝংকার তোলে তার অন্য কোন তুলনা হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালেই শামসুর রাহমানের কবি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিক কবিতার সাথে তার পরিচয় ও আন্তর্জাতিক-আধুনিক চেতনার উন্মেষ ঘটে ১৯৪৯ সালে। এ সময় তার প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়। প্রথম কাব্য গ্রন্থ প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তার লেখা ‘বর্ণমালা, আমার দুখিনী বর্ণমালা’, ‘আসাদের শার্ট ’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, এসব কবিতার মধ্যে তার বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে নানাবাড়িতে। পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় পাড়াতলী গ্রামে। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। ১৩ ভাই বোনের মধ্যে শামসুর রাহমান ৪র্থ। কবির জীবনের পুরোটা সময় কেটেছে ঢাকা শহরে। শৈশব, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা এ ঢাকাতেই। ২০০৬ সালের ১৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শেষ ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, শামসুর রাহমান বাঙালীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি নগরে বাস করলেও শুধু নাগরিক কবি ছিলেন না, ছিলেন জনতার কবি।