বিডি মেট্রোনিউজ ॥ শরিকদের সঙ্গে শিথিল সম্পর্ক দৃঢ় করে তোলার লক্ষ্যে বিএনপি উদার মনোভাব নিয়েছে। শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি তাদের সঙ্গে জোটগত সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শরিকদের কার কোথায় যোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছে তার তালিকা চাওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিএনপি শরিকদের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছেনা।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের নেতৃস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর অসন্তোষ দূর করা এবং তাদের নিয়ে জোটগত অবস্থান সংহত করতেই বিএনপির এই উদারতা। পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে জামায়াত ও অন্যরা তাদের প্রত্যাশিত সাড়া পায়নি। বিএনপি তাদেরকে কোন ছাড় না দেয়ায় জামায়াতসহ অন্য শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। এই অসন্তোষ ও ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটে জোটের অন্যতম বৃহৎ শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার মধ্যে দিয়ে।
মরহুম ফজলুল হক আমিনীর দল, মুফতি ওয়াক্কাসের জামায়েতে উলামায়ে ইসলামের দলসহ ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দলগুলোর শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সাথে সরকারি সংশ্লিষ্ট নেতাদের সাথে নিয়মিত ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। জোটে থাকা আরো কয়েকটি দলের সাথেও সরকারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও যোগাযোগ রয়েছে। সামনে তাদের অবস্থান ও ভূমিকা কি দাঁড়ায় তা নিয়ে শংকিত বিএনপির শীর্ষমহল।
বিএনপির শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানের মামলার রায়ের পর দলটির নেতাদের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও চিন্তিত বিএনপির শীর্ষমহল। বিদ্যমান অবস্থায় এবং আগামির সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই ২০ দলীয় জোটের শরিকরাও তাদের কর্ম-কৌশল ও পরিকল্পনা স্থির করছে। অন্যতম শরিক দল জামায়েতে ইসলামী নিয়েই বিএনপি মহলের চিন্তা এখন দু:শ্চিন্তায় রূপ নিয়েছে। আদর্শগতভাবে তারা অভিন্ন অবস্থানে থাকলেও বিদ্যমান সংকটজনক রাজনৈতিক অবস্থায় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধ বিএনপিতে প্রকটভাবেই কাজ করছে।
অসন্তোষ, ক্ষোভের প্রশমন ঘটিয়ে আস্থা পুন:প্রতিষ্ঠায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতকে তাদের চাহিদা মাফিক প্রার্থী তালিকা দিতে বলা হয়েছে। বিএনপির দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থেকেও তাদের অব্যাহতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জামায়াতকে প্রয়োজনে সত্তর থেকে পচাঁত্তরটি ইউনিয়ন পরিষদে ছাড় দেয়ার কথা জানান হয়েছে। ধানের শীষ প্রতীক ছাড়াই তারা এসব ইউনিয়ন পরিষদে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে পারবে। এদের বিপরীতে বিএনপি প্রার্থী দেবেনা। বিএনপির এই প্রস্তাব জামায়াতের জন্য রাজনৈতিকভাবে লোভনীয় হলেও তারা এতে সাড়া দিচ্ছেনা। বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তায় সরকারের বিরাগভাজন হতে পারে এমন কোন বিষয় তারা সতর্কে এড়িয়ে চলার নীতি নিয়েছে। জামায়াত বিএনপির সাথে ইউপি নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে যায় কিনা তা সরকারি সংস্থাসমুহ গভীর পর্যবেক্ষনে রেখেছে।
জামায়াত সূত্রে জানা যায়, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় স্থানীয় প্রার্থীরা সমঝোতায় এলেও দলগতভাবে জামায়াত বিএনপির সাথে নির্বাচনী সমঝোতায় আসবেনা। জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দড়ি ঝুলে থাকার কারণেই তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা। সামনে বিএনপি জোটগতভাবে সরকার বিরোধী কর্মসূচি দিলে তাতেও জামায়েতের সক্রিয় জোরালো অংশগ্রহণ থাকবেনা। বিএনপি শঙ্কিত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা জামায়াতকে পাশে পাবে কিনা।
২০ দলীয় জোটভুক্ত অপরাপর শরিকদের ব্যাপারে বিএনপি চিন্তিত নয়। তাদের অঞ্চলভিত্তিক, এমনকি নির্বাচনী এলাকাভিত্তিকও তেমন কোন সাংগঠনিক শক্তি, জনপ্রিয়তাও নেই। জোটগত রাজনীতির স্বার্থেই তাদের ছাড় দেয়া হবে।