মেট্রো নিউজ :সততা দেখিয়ে আজকাল এমন হিরো হতে পারে কজন। রিকশায় ফেলে যাওয়া কয়েক লাখ টাকার গয়না উপযুক্ত মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে হিরো বনে গেলেন রিকশাচালক মহম্মদ নুর। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের।
নুর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে রিকশাচালক। পুজার ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় কয়েক ঘণ্টা রিকশা চালানোর পরে তখন সবেমাত্র কাঁধে ফেলে রাখা গামছাটা দিয়ে মাথার ঘাম মুছছিলেন নুর। হঠাৎ সিটের দিকে নজর পড়ে তার। দেখেন, মেয়েদের একটি হাতব্যাগ পড়ে আছে। এতক্ষণে কম তো কাস্টমার চড়েনি রিকশায়। কার ব্যাগ ভেবে পাচ্ছিলেন না। ভাবলেন, খুলে দেখি ভিতরে যদি ঠিকানা পাওয়া যায়।
ব্যাগের চেইন খোলার পরে নুরের চক্ষু চড়কগাছ। একগাদা সোনার গয়না ঠাসা ব্যাগটায়। না কোনো লোভ করেননি নুর। মনে মনে বললেন, ‘অন্যের টাকা নিয়ে আমি কী করব! গতর খেটে যা রোজগার করব, তা দিয়েই সংসার চলে যাবে।’
শহর-লাগোয়া বিহারের মান্নাপাড়ায় থাকেন নুর। রিকশা চালান ইসলামপুর পুর এলাকায়। অভাবের সংসারে নিজের মোবাইল ফোন-টোনও নেই। কী ভাবে ফোন করতে হয় মোবাইল থেকে তা-ও জানেন না নুর। কীভাবে ফেরাবেন গয়নাগাটি? বৃহস্পতিবার, নবমীর রাতে তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় ১২টা ছুঁয়েছে। অনেক ভেবেচিন্তে আর এক রিকশা চালককে ঘটনাটা জানান নুর।
দুই মাথা এক হয়ে ঠিক হয়, থানায় গেলেই ভাল। কিন্তু থানার চৌকাঠ পেরোতে কার না বুক ঢিপঢিপ করে! নুররা তাই গোটা ঘটনাটা জানান স্থানীয় এক পুজা কমিটির সদস্যকে। তিনিই ব্যাগের মধ্যে থাকা ফোন ঘেঁটে রতন পালের শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই রতন আর তার স্ত্রী রুমকিই নবমীর রাতে উঠেছিলেন নুরের রিকশায়। রুমকি দেবীর হাত থেকেই খোওয়া গিয়েছিল গয়না-ভর্তি ব্যাগ।
কংগ্রেস রোডের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী রতন পাল। তার পুরো পরিবারই ততক্ষণে দিশাহারা। থানা-পুলিশও করেছেন। রিকশায় ব্যাগ ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছিল রুমকিদেবীর। যেখান থেকে রিকশা নিয়েছিলেন সেখানে গিয়েও খোঁজ মেলেনি কিছুর। অবশেষে অচেনা নম্বর থেকে রতন পালের শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয়ের কাছে আসা একটা ফোনই বদলে দিল পরিবেশ। জানা গেল, মহম্মদ নুর নামে এক রিকশাচালকের কাছে সযত্নে গচ্ছিত আছে রুমকি দেবীর গয়নার ব্যাগ।
রাত ২ টা নাগাদ থানায় পৌঁছান নুর। পুলিশের সামনেই ব্যাগ হস্তান্তর করেন। পুলিশ কর্তারা ব্যাগ খুলে সব দেখে নিতে বলেন। দেখা যায়, প্রায় ৬ ভরির সোনার গয়না, মোবাইল ফোন, সব একদম ঠিকঠাক।
পুলিশ জানায়, নুরের হাতে আড়াই হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন রতন পাল। ওই ঘটনার পরে এলাকায় কার্যত ‘হিরো’ বনে গিয়েছেন নুর। ইসলামপুর থানার কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনকার দিনে এমন সৎ মানুষের খোঁজ মেলা ভার। ওকে কুর্নিশ জানাই।’ আর রতন পালের কথায়, ‘ওর সততার তুলনা হয় না।’
অন্যদিকে রুমকি দেবী তো কান্ড করেই চলেছেন, যাকে সামনে পাচ্ছেন নুরের তারিফ করছেন তার কাছেই। বলেন, ‘সংসারে যার এত অভাব, তিনি এত সৎ হতে পারেন, ভাবতেই পারছি না। কত বড় মাপের মানুষ উনি!’