নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউরোপের দেশ জার্মানিতে শুরু হলো ওয়ালটন টেলিভিশন রপ্তানি। এর ফলে দেশের টেলিভিশন উৎপাদন শিল্পে উন্মেচিত হলো নতুন এক দিগন্ত। এর মাধ্যমে ইউরোপে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটন পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ কার্যক্রম আরো সহজ হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হবে।
এ উপলক্ষ্যে আজ শনিবার (২০ এপ্রিল ২০১৯) গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন টিভি ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটে ‘ইনএগোরেশন সিরিমনি অব টেলিভিশন এক্সপোর্ট টু ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান ডেপুটি হেড অব মিশন মাইকেল শুল্থহাইস।
উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আশরাফুল আলম এবং পরিচালক রাইসা সিগমা হিমা এবং মাইকেল শুল্থহাইস এর স্ত্রী শার্লোট কেমেনসেন। তারা কেক ও ফিতা কেটে জার্মানিতে ওয়ালটন টিভি রপ্তানি কার্যক্রমের শুভসূচনা করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম, প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. হুমায়ূন কবীর, উদয় হাকিম, গোলাম মুর্শেদ, আলমগীর আলম সরকার, ইউসুফ আলী ও আমিন খান, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফিরোজ আলম, মিডিয়া উপদেষ্টা এনায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।
মাইকেল শুল্থহাইস বলেন, বিশ্বের সেরা মেশিনারিজ সমৃদ্ধ ওয়ালটন কারখানায় পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে আমি অভিভূত। ওয়ালটন একটি বড় লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। উচ্চমানের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে ওয়ালটন জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বিশ্বে বাংলাদেশি পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার জার্মানি। এতদিন জার্মানিতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ইলেকট্রনিক্স পণ্য দিয়ে জার্মানিতে নতুন রপ্তানি খাতের শুভসূচনা করলো ওয়ালটন। এতে দুই দেশের বাণিজিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।
ওয়ালটনের জার্মান মার্কেট বিষয়ক প্রধান তাওসীফ আল মাহমুদ বলেন, জার্মানিতে টিভি রপ্তানির মাধ্যমে নতুন দিগন্তের সূচনা করলো ওয়ালটন। এর ফলে ইউরোপে বাংলাদেশি ইলেকটনিক্স পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ সহজ হবে। তিনি জানান, এ বছর ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইন কেনাকাটার প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনে পাওয়া যাবে ওয়ালটনের টিভি, রেফ্রিজারেটর এবং এসি। ইউরোপের যেকোনো দেশের ক্রেতারা ঘরে বসেই কিনতে পারবেন ওয়ালটন পণ্য।
অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে নিযুক্ত ওয়ালটন আইবিইউ শাখার ইনচার্জ আব্দুর রউফ বলেন, প্রথম ধাপে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের কাছ থেকে ৩ কন্টেইনার টেলিভিশন নিচ্ছে। এই রপ্তানির মাধ্যমে দেশের রিজার্ভে যুক্ত হবে প্রায় ৩ লাখ মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা। এ বছরই তারা ওয়ালটন থেকে আরো ১ লাখ পিস টিভি নেবে।
ওয়ালটন টেলিভিশন বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, ওয়ালটন টেলিভিশন তৈরি হয় আন্তর্জাতিক মান ও স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে। ওয়ালটন টেলিভিশন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মুক্ত এবং রয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার ফলে টেলিভিশন তৈরি ও রপ্তানিতে ওয়ালটন অর্জন করেছে সিই (CE), আরওএইচএস (ROHS), ইএমসি (EMC) ইত্যাদি সনদ।
ওয়ালটন আইবিইউ’র প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি ব্র্যান্ডের কাতারে আসার লক্ষ্য ওয়ালটনের। এ বছর ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানি করছে ওয়ালটন। আর ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে কাজ চলছে।
জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন টিভি ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটে আইএসও কাস সেভেন ডাস্ট ফ্রি কিন রুমে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এইচএডিএস (হাই অ্যাডভান্স সুপার ডাইমেনশন সুইচ) এবং আইপিএস (ইন প্ল্যান সুইচিং) প্যানেল তৈরি করছে ওয়ালটন। রয়েছে টিভির মাদারবোর্ড, ডিসপ্লে, রিমোট, স্পিকার, কেসিং অ্যান্ড হাউজিংসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ তৈরির আলাদা প্রোডাকশন লাইন। সেখানে জার্মান প্রযুক্তির সারফেস মাউন্টিং টেকনোলজিসহ বিশ্বের লেটেস্ট সব প্রযুক্তির মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়েছে। সেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে আন্তর্জাতিকমানের টেলিভিশন তৈরি করে স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এর আগে কারখানা প্রাঙ্গনে পৌঁছে জার্মান ডেপুটি হেড অব মিশন প্রথমে ওয়ালটনের বিশাল কর্মযজ্ঞের উপর নির্মিত ভিডিও ডক্যুমেন্টারি উপভোগ করেন। জার্মানিতে টিভি রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধনের পর তারা ওয়ালটনের সুসজ্জিত প্রোডাক্ট ডিসপ্লে সেন্টার ঘুরে দেখেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অতিথিরা ওয়ালটনের বিশ্বমানের রেফ্রিজারেটর কম্প্রেসর, এয়ার কন্ডিশনার, এলইডি টেলিভিশন ইত্যাদি উৎপাদন প্রক্রিয়া সরেজমিনে ঘুরে দেখেন।