‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা দিলেন খালেদা

বিডি মেট্রোনিউজ  বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা দিলেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর খসড়া পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, অচিরেই চূড়ান্ত করে সেটি জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে।  তাঁর পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। জাতীয় সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট।

আজ শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী পর্বে খালেদা জিয়া দলের পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপি নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ জন্য নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে বিএনপি উদ্যোগ নেবে।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এই অবস্থার অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে।’ তিনি আরও বলেন, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। এ জন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে উন্নীত করতে সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ নেবে বিএনপি। তারা সুনীতি, সুশাসন ও সুসরকারের সমন্বয় ঘটাতে চায়।

খালেদা জিয়া তাঁর পরিকল্পনায় নির্বাচনী ইশতেহারের মতো কীভাবে দেশ পরিচালনা করবেন, ক্ষমতায় গেলে কী কী করবেন, কোন কোন খাতে সংস্কার আনবেন—তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কীভাবে করবেন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁদের এই পরিকল্পনাটি এখনো খসড়া। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত পরিকল্পনায় বিস্তারিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিবরণ থাকবে। এই ভিশনের আলোকেই ভবিষ্যতে বিএনপির ইশতেহার রচিত হবে।

সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনার পাশাপাশি খালেদা জিয়া তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে ভবিষ্যতে নতুন ধারার রাজনীতি করারও ঘোষণা দিয়েছেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ মরহুম জাতীয় নেতাদের অবদানের কথা স্মরণ করছি। তাঁরা দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিলেন।’

খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সৃজনশীল, ইতিবাচক ও ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সরকার ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এ জন্য নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে বিএনপি উদ্যোগ নেবে। এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা কি কেবলই ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করব? আমরা কি কেবল এক পক্ষ আরেক পক্ষকে হেনস্তা ও ধ্বংস করে দিতে চাইব? রাজনীতি তো দেশের জন্য, মানুষের জন্য। সেই দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে মানুষের ওপর জবরদস্তির শাসন চালিয়ে লাভ কী? এই দূষিত রাজনীতির চক্র থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, দেশে ক্ষমতায় থাকা ও না থাকার মধ্যে বেহেশত ও দোজখের মতো দুস্তর ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। স্বর্গচ্যুত হয়ে নরক যন্ত্রণা ভোগের ভয়ে তাই অনেকে ক্ষমতা ছাড়তে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে বা ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে সব রকমের অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি আশ্বাস দেন, ভবিষ্যতে তাঁরা ক্ষমতায় গেলে কাউকে অযথা হেনস্তা হতে হবে না, কারও প্রতি অবিচার করা হবে না। সরকার ও বিরোধী দলকে মর্যাদা ও অধিকারের দিক থেকে আরও কাছাকাছি আনতে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি পথ উদ্ভাবন করতে হবে।

সরকারকে আবারও আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, প্রায় সবাই একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল, গণতান্ত্রিক সরকার চায়। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন।

কাউন্সিল উপলক্ষে সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলর, ডেলিগেট ছাড়াও বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি ধারণ করা ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। কাউন্সিলে উপস্থিত বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্বতন্ত্র সাংসদ সায়মন ডেনচুক, সে দেশের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) আন্তর্জাতিক বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও সাবেক ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ফিল বেনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা বারবারা মুর ও শিকাগো সিটির কাউন্সিলর অলডারম্যান জো মুর শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ২০-দলীয় জোটের পক্ষে এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ। কাউন্সিলে জামায়াতসহ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি কাউন্সিলে যাননি।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। দলীয় পতাকা তোলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকেলে কাউন্সিলের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিল অধিবেশন হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts