বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আমরা ঘরে বসেই এবারের নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করবো। কবিগুরুর কালজয়ী গান ‘‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা” গেয়ে আহ্বান করবো নতুন বছরকে। অতীতের সকল জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা সামনে দৃপ্ত-পায়ে এগিয়ে যাবো; গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ্বকে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় তাই বলতে চাই:
মেঘ দেখ কেউ করিসনে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে,
হারা শশীর হারা হাসি
অন্ধকারেই ফিরে আসে।
সমগ্র বাংলাদেশে এবং প্রবাসে বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন। রাজধানীতে রমনা পার্ক, চারুকলা চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নগরীর নানা স্থান মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে এ দিনটি। গ্রামীণ মেলা, হালখাতাসহ নানা অনুষ্ঠানে গোটা দেশ মেতে উঠে।
এবার সবাইকে অনুরোধ করবো কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজ-সহ নানা মওসুমী ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। ভয় মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দূর্বল করে। কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না। আমাদের সকলকে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। সরকার সব সময় আপনার পাশে আছে। কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এ সঙ্কটকালে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।
আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। মিডিয়া কর্মীদের প্রতি অনুরোধ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঠিক তথ্য তুলে ধরে এই মহামারী মোকাবিলা করতে আমাদের সহায়তা করুন।
যে আঁধার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। বৈশাখের রুদ্র রূপ আমাদের সাহসী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মাতিয়ে তোলে ধ্বংসের মধ্য থেকে নতুন সৃষ্টির নেশায়। বিদ্রোহী কবির ভাষায় তাই বলতে চাই:
ঐ নূতনের কেতন ওরে কাল-বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন- জীবন হারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!
অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব কাটাতে যে ৪ উদ্যোগ :
মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য সরকার মোটাদাগে চারটি কার্যক্রম নির্ধারণ করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সরকারপ্রধান এ কথা জানান।
প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে আমরা চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করেছি। যা অবিলম্বে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট তিন মাসে, স্বল্প মেয়াদে- আগামী অর্থবছরে এবং মধ্য মেয়াদে- পরবর্তী তিন অর্থবছরে- এই তিন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে।’
সরকার গৃহীত চারটি কার্যক্রম হচ্ছে :
(১) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকেই’ প্রাধান্য দেওয়া হবে।
(২) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন : অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
(৩) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে।
(৪) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা : অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ১০০ কোটি:
চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাকে ‘চ্যালেঞ্জের’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীগণ সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে একেবারে সামনের কাতারে থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের পেশাটাই এ রকম চ্যালেঞ্জের। এই ক্রান্তিকালে মনোবল হারাবেন না। গোটা দেশবাসী আপনাদের পাশে রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীর পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। যেসব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনাভাইরাস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন ইতিমধ্যেই তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।’
‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে’, বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা।’