সুচিত্রা ভট্টাচার্য : এই প্রথম বিশ্ব সাহিত্যে কোনও ‘জুটি’ তৈরি হল। আর তা হল, এই লক ডাউনের সময়ই। সম্প্রতি গৌতম ঘোষ সম্পাদিত ‘খাস খবর’-এ ২০১২ সালে বঙ্গ শিরোমনি পুরস্কারে সম্মানিত এবং ২০২০ সালে সাহিত্যসম্রাট উপাধিতে ভূষিত কথাসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ এবং এই সময়ের একজন বিশিষ্ট কবি কৃষ্ণ গুহ রায় যৌথ ভাবে একটি গদ্য রচনা করেছেন। নববর্ষকে নিয়ে— ‘পহেলা বৈশাখ’। লেখাটি শুধু যে নেট দুনিয়াতেই ভাইরাল হয়েছে, তা নয়। দেশ-বিদেশের বহু পত্র-পত্রিকা সেটাকে পুনর্মুদ্রণও করেছে।
এই বিপুল সাড়া পাওয়ার পরেই এই জুটি ঠিক করেছেন এ বার থেকে নিজস্ব মৌলিক লেখালিখি, যেমন কবিতা, ছড়া, গল্প, নাটক, উপন্যাস, এমনকী গানও তাঁরা নিজ নিজ নামে লিখলেও, যখনই কোনও গবেষণামূলক প্রবন্ধ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনও ফিচার বা নিবন্ধ লিখবেন, তখন দু’জনে মিলেই লিখবেন। যেহেতু এই ধরনের লেখা লিখতে গেলে একটু পড়াশোনা করতে হয়, তথ্য জোগাড় করতে হয় এবং লাইব্রেরি ওয়ার্ক করতে হয়, যেটা একজনের পক্ষে করাটা বেশ সময়সাপেক্ষ, তাই সিদ্ধার্থবাবু এবং কৃষ্ণাদেবী ঠিক করেছেন, এ বার থেকে এই ধরনের লেখালিখিগুলো তাঁরা দু’জনে মিলেই জুটি বেঁধে লিখবেন।
তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এতে কোনও সমস্যা হবে না? যখন এই লেখাগুলো দু’মলাটে বন্দি করে কোনও বই হয়ে বেরোবে, তখন কি একই বইয়ের লেখক হিসেবে আপনাদের দু’জনের নামই থাকবে? রয়্যালটি কী ভাবে ভাগ হবে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘উড়ালপুল’ পত্রিকার কলকাতার বাংলা বিভাগের সম্পাদক সিদ্ধার্থ সিংহ জানালেন, দু’জন আর্কিটেকচার মিলে যদি একটা বহুতলকে অসম্ভব সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে পারেন, দু’জন চিত্রপরিচালক মিলে যদি একটা মারকাটারি সিনেমা তৈরি করতে পারেন, দু’জন মালি মিলে যদি কোনও বাগানে চোখ ধাঁধানো ফুল ফোটাতে পারেন, তা হলে আমরা দুজনে মিলে কেন একটি লেখাকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারব না?
আন্তর্জাতিক স্বপ্নরাগ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিবারের কর্ণধার কৃষ্ণা গুহ রায় বললেন, আমরা বিশ্বাস করি, কে লিখছেন সেটা বড় কথা নয়, কী লেখা হচ্ছে সেটাই আসল কথা। সেটা ঠিকঠাক তথ্যনির্ভর হচ্ছে কি না, আবার তথ্যের চাপে লেখাটি ভারাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে কি না, দেখতে হবে তাও। অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকতে হবে, কোনও ভুলভাল ডাটা যেন চলে না যায়। দরকার হলে বারবার যাচাই করতে হবে। একবারের জায়গায় দশ বার। যা একজনের পক্ষে করাটা সত্যিই বেশ কষ্টসাধ্য। সেই কাজটাকেই সহজে এবং নির্ভুল ভাবে করার জন্য আমরা জোট বেঁধেছি।
সিদ্ধার্থবাবু এবং কৃষ্ণদেবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুধু লেখালিখিই নয়, একটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রকাশনী সংস্থার বেশ কিছু অভিনব সংকলন সম্পাদনার কাজও তাঁরা যৌথ ভাবেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত জানাই, এর আগে সিদ্ধার্থবাবু যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়-সব আরও অনেক প্রতিথযশা কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে। সে সব-সহ একক ভাবে ঢাউস ঢাউস প্রায় পাঁচশো ওপর সংকলন করেছেন তিনি। যেগুলো মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হয়েছে। এর পাশাপাশি নিজের লেখা শ’তিনেক বই তো আছেই।
এখন দেখার, বাংলা সাহিত্যের এই অভিনব জুটির দেখাদেখি আরও কোনও নতুন জুটি বাংলা সাহিত্য শাসন করতে এগিয়ে আসে কি না।