চুপ থাকতে পারলাম না

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী সাদিকা পারভিন পপি। চলচ্চিত্রের স্বার্থে নানা সময়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে তাকে। এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিলেন এই চিত্রতারকা।

রোববার (২৬ জুলাই) রাতে নিজের ফেসবুক পেইজে একটি দীর্ঘ পোস্ট শেয়ার করেছেন পপি। সেখানে নাম উল্লেখ না করেই শিল্পী সমিতির একজনকে দালাল বলে আখ্যায়িত করে তিনি লিখেছেন, ‘যদিও আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মানসিকভাবে হতাশ, তবুও চুপ থাকতে পারলাম না। আমি চলচ্চিত্রের মানুষকে শ্রদ্ধা করি এবং ভালোবাসি। কিন্তু আমি একজনকেই দালাল বলে আখ্যায়িত করেছি। বিষয়টি আমি এবং সে ছাড়াও পুরো চলচ্চিত্রের সব মানুষই জানেন।’

গেল কয়েকমাস আগে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছিলো পপিকে। সেই চিঠির একটি ছবিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন নায়িকা। তবে প্যাডটি শিল্পী সমিতির হলেও স্বাক্ষরের ঘরে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নাম দেখা যায়!

ওই চিঠির সম্পর্কে পপি লেখেন, ‘কিসের জন্য এই চিঠি? কেন আমাকে পাঠিয়েছিলো? কোন সমিতির চিঠি এটা? কার স্বাক্ষর নাকি জায়েদের ব্যক্তিগত কোনো সমিতির চিঠি এটা? তাকে এত বড় ক্রাইম করার সাহস কে দিয়েছে বলেও প্রশ্ন তোলেন এই নায়িকা।

‘অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে আজকে আমি পপি হয়েছি। আমার একক নামে বহু সুপারহিট সিনেমা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে উপহার দিয়েছি। এমনকি ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছি।’ যোগ করে বলেন পপি।

দীর্ঘ পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয়ভাজন ফারুক, সোহেল, আলমগীর ভাইদের সঙ্গে আমি সৌভাগ্যক্রমে বহু সিনেমাতে অভিনয় করেছি। তারা কি আমার সদস্য পদ বাতিলের জন্য চিঠি দিতে বলেছেন। নাকি আমাদের মতো শিল্পীরা চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিক সেটা চাইছেন। শুধুমাত্র একজনের নোংরামির কারণে!’

জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে পপি লেখেন, গেল দশ বছরে একটা সুপারহিট সিনেমা তো দূরের কথা, একটা হিট সিনেমাও ইন্ডাস্ট্রিকে দিতে পারেনি। উলটো সিনিয়র শিল্পীদের নাম ভাঙিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়েছে। নোংরা রাজনীতি, অস্ত্র, অশোভন আচরণ, মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যায় ভাবে সদস্য পদ কেড়ে নিয়েছে। যে তার জন্মকে অস্বীকার করে, তাকে কি বলে সম্বোধন করা উচিত সেটা আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম বলেও মন্তব্য করেন এই অভিনেত্রী।

সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্প চর্চা ও মেধা বিকাশের মাধ্যম। একজন সংগঠনের নানা পদে জায়গা করে নিতে পারেন। কিন্তু প্রকৃত শিল্পী হয়ে উঠতে পারেন না। শ্রম ও সাধনা দিয়ে তবেই দর্শকদের মন জয় করে নিতে হয়। পরিশেষে বলতে চাই, ‘আমি চলচ্চিত্রের পপি, আমি সিনেপ্রেমীদের পপি, আমি কোনো ব্যক্তি কিংবা সমিতির পপি নই।’

পপির সঙ্গে একমত পোষণ করে চিত্রনায়ক ওমর সানি জানান, ‘এই যে তার (জায়েদ খান) এত অহংকার, অহমিকা, ক্ষমতা এসব আসে কোথায় থেকে? এমনকি, অনেকের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা দাবি করার মতোও অনৈতিক কাজ করেছে। এমন ধরনের নানা অভিযোগ আছে, যেসবের প্রমাণও আছে। শুধু তাই নয়, বিনা কারণে সদস্যদের পদ কেড়ে নেওয়ার হুমকিতে ভয় পেতে হবে, এটা কেন? তাই পপি যেসব অভিযোগ এনেছে তার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত। কেননা সে বুঝে শুনেই অভিযোগগুলো করেছে।’

ওমর সানি এও বলেন, ‘শিল্পী সমিতির প্যাডে স্বাক্ষর করেছে জায়েদ খান, আর সংগঠনের নাম চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি? এটা তো বিশাল অপরাধ।’ নায়কের মতে, ‘আমার তো মনে হচ্ছে, জায়েদ নিজের থেকে অপমানিত হতে চাইছেন। আর সেকারণেই আজ তার এই অধপতন! সব মিলিয়ে শিল্পী সমিতির একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে খুব শিগগিরই তার পদত্যাগ দাবি করছি।’

বিষয়টি সম্পর্কে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুর বলেন, সত্যি বলতে অন্যায় করতে করতে একসময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আর তখনই এমন ঘটনা ঘটে। এমনকি শিল্পী সমিতির ১৮৪ জন সদস্যকে ছাটাই করে ভুলেই গেছেন যে, তিনি কোন সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আজ উনি পরিচালক সমিতির নামে স্বাক্ষর করেছেন, দু’দিন পর যদি প্রযোজক সমিতির নামে স্বাক্ষর করেন তাতেও অবাক হবেন না বলে মন্তব্য করেন খসরু।

ইন্ডাস্ট্রিতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, ‘চলচ্চিত্র পরিবারের আওতায় ১৮টি সংগঠন শিল্পী সমিতির দুই নেতা মিশা-জায়েদের বয়কটের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা দু’জন পদত্যাগ না করলে কোনো আলোচনা নয় বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন প্রযোজক-পরিবেশেক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু।

Print Friendly

Related Posts