বাংলাদেশের মহান বন্ধু শ্রী প্রণব মুখার্জী সুস্থ হোন, দীর্ঘজীবী হোন

মুসা সাদিক

 

বাংলাদেশের মহান বন্ধু সর্বজন শ্রদ্ধেয় ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভারতরত্ন শ্রী প্রণব মুখার্জী গুরুত্বর অসুস্থ। সমগ্র দেশবাসী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমি তাঁর দ্রুত রোগ মুক্তি কামনা করছি।

১৯৭১ সালে আমার মামা জনাব রুহুল কুদ্দুসের সাথে তাঁর আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। তাঁর বাড়িতে ’৭১ সাল থেকে আমারও যাতায়াত ছিল। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো আমার মামা পাকিস্তান সরকারের সচিব জনাব রুহুল কুদ্দুস মুজিবনগর প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তখন থেকে অর্থনীতির অধ্যাপক প্রণব মুখার্জী বাবু আমার মামার সাথে দেখা করতে আসতেন। তিনি বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ছাত্র-শিক্ষক নিয়ে কলকাতার রাজপথে চাঁদা তুলতেন। ব্যবসায়ীদের থেকে সাহায্য তুলে শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠাতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্ধ সমর্থক ও অকৃত্রিম বন্ধু। তখন থেকে কলকাতায় ঢাকুরিয়াতে তাঁর বাসায় আমার ও মামার যাতায়াত ছিল। সেই সূত্রে তাঁর সুপুত্র অভিজিৎ মুখার্জীর সাথে আমার গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক গড়ে ওঠে।

আমি রণাঙ্গন থেকে যখনই কলকাতায় ফিরতাম, সুযোগ পেলেই আমি স্বাধীন বাংলা বেতারের ২/১ জন শিল্পীসহ শ্রদ্ধেয় প্রণব বাবুর বাসায় যেতাম। তিনি গভীর স্নেহ মমতায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন, যখন শুনতেন রণাঙ্গনে আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়েছিলাম।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাধীন বাংলা বেতারের “ওয়ার করেসপন্ডেন্ট” হিসেবে নিয়োগ লাভ করে বিভিন্ন রণাঙ্গনে ৯ মাসব্যাপী নিরবচ্ছিন্নভাবে চরম ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করি। প্রতিদিন মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে নির্ভিকচিত্তে বৃষ্টির মতো গোলা-গুলির মধ্যে জীবন বাজী রেখে সংবাদ সংগ্রহ করতাম। সেসাথে রণাঙ্গনে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা আমার Secret assignment ছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অবস্থান স্থল, পজিশন ও ডিফেন্স লাইন ভেদ করে অতি সঙ্গোপনে তাদের পেছনে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য সংগ্রহ করতাম। যেগুলো আমাদের সেক্টর কমান্ডার ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হতো।

রণাঙ্গনে থেকে ফিরে স্বাধীন বাংলা বেতারের ক’জন শিল্পী জব্বার ও ডালিম যদি কখনো অভিজিৎ বাবুদের বাসায় যেতাম, তিনতলায় বিছানায় বসে আমাদের খাওয়া দেয়া হতো। অভিজিৎ বাবুর স্নেহময়ী জননী স্বর্গীয় শুভ্রা মুখার্জীর সমাদরের ও আপ্যায়নের কথা আমরা পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

১৯৭১ সালে শ্রী প্রণব মুখার্জী বিদ্যানিকেতন কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। কখনো যদি সন্ধ্যায় ওঁনাকে বাসায় পেতায়, উঁনি সর্বপ্রথম আমার মামা জনাব রুহুল কুদ্দুসের কথা জিজ্ঞেস করতেন। তারপর তিনিসহ সকলে আমার কাছে বিভিন্ন রণাঙ্গনে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়তেন। আমি রণাঙ্গনের লোমহর্ষক যুদ্ধের বর্ণনা দিতাম। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের “জয় বাংলা” ও “জয় বঙ্গবন্ধু” শ্লোগান দিয়ে গ্রেনেড হাতে পাকিস্তানী বাঙ্কারে ঝাঁপিয়ে পড়ে শহীদ হয়ে যাবার দৃশ্য বর্ণনা করতাম। শ্রী প্রণব মুখার্জী বিশেষ করে, তাঁর সহধর্মিনী শ্রীমতি শুভ্রা মুখার্জী অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়তেন। মনে পড়ে, ফিরে আসার সময় প্রণব বাবু কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উচ্চস্বরে আবৃত্তি করতেন: “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই, ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই…..।”

অভিজিৎ বাবু লিফটে নীচে পর্যন্ত এসে আমাদের বিদায় জানাতেন। এভাবে প্রতি মাসে ২/৩ বার যাতায়াতের মধ্যে ৯ মাস পার হয়ে গেল। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয় লাভের ২/৩ দিন পর স্বাধীন বাংলা বেতারের আমরা চারজন শিল্পী জব্বার, ডালিম, প্রণোদিৎ বড়ুয়া ও আমি প্রণব বাবুর ঢাকুরিয়ার বাসায় বিদায়ী সাক্ষাত করতে গেলাম। প্রণব বাবু আমাদের চারজনকে চারটি সোয়েটার উপহার দিলেন। আমাদের মাথায় হাত রেখে বললেন, “পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমাদের বাংলাদেশের এই বিজয় অপূর্ণ বিজয় হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসলে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর জনগণের স্বপ্ন পূরণ হবে না।”

আমি তাঁকে বললাম, “স্যার, রণাঙ্গনে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা শপথ নিয়েছে ভারতের পশ্চিম রণাঙ্গনে গিয়ে পাক সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের দেশের কারাগার ভেঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত স্বাধীন করে আনবেন।”

তিনি বললেন: “এটা একটা বিরাট সুখবর। তুমি তাঁদেরকে আমার অভিনন্দন ও আশির্বাদ জানিয়ে দিও।”
তিনি আশ্বাস দিয়ে বললেন, “তোমাদের কোন ভয় নেই। তোমাদের হাতে তাদের এক লক্ষ সেনাবাহিনী বন্দী হয়ে আছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর একটা চুল পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারবে না। সসম্মানে তাঁকে বাংলাদেশে ফেরৎ দিতে তারা বাধ্য হবে। তা নাহলে, তোমাদের হাতে বন্দী তাদের এক লক্ষ সেনাবাহিনীর মধ্যে একজনও জীবিত ফিরে যেতে পারবে না। একমাত্র বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে বাংলাদেশের কাছে ফেরৎ পাঠানোর পর তাদের সেনাবাহিনীর এক লক্ষ সদস্যকে তারা ফেরৎ চাইবার আশা করতে পারে।”

আমরা আনন্দে তাঁর পদধূলি নিয়ে “জয় বাংলা”, “জয় হিন্দ” বলে বিদায় নিয়ে এলাম। ওঁনার গেটের বাইরে কংগ্রেসের কর্মীরা আমাদেরকে “জয় বাংলা” বলে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। আমাদের বিজয়ের ১ দিন পরে আমার মামা রুহুল কুদ্দুস, প্রতিরক্ষা সচিব জনাব আব্দুস সামাদ ও মন্ত্রী এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানকে প্রণব বাবুর বাসায় দাওয়াত দেয়া হয়। মামা আমাকে সাথে নিয়ে যান। তাঁর বাড়িতে রাতের ডিনারের পর তিনি মামাকে বললেন, “পাক সেনারা বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে দিয়ে গেছে। তবে আপনাদের আগামী এক বছরের বাজেট ভারত সরকার দেবে মর্মে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী জানিয়েছেন।”

আমার মামা, সচিব আব্দুস সামাদ ও মন্ত্রী জনাব কামারুজ্জামান সাহেব গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাঁকে শুভ বিদায় জানিয়ে চলে আসেন। স্বাধীনতার পরেও তাঁর সাথে আমার ও মামার গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো এবং আমরা কলকাতায় গেলেই তাঁর বাসায় এক বেলা খাবার আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিলো। আমরাও যাবার সময় পদ্মার ইলিশ নিয়ে যেতাম এবং তিনি সবসময় না, না করতেন এবং আর কখনো না নেয়ার অনুরোধ করতেন। স্বাধীনতার পর দিল্লীতে তিনি যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী তখন যখনই আমি সস্ত্রীক ও সন্তানদের নিয়ে তাঁর দিল্লীর ১৩ নং তালকোটারা রোডের বাসায় গেছি, তিনি ও তাঁর সহধর্মিনী শ্রীমতি শুভ্রা মুখার্জী এবং তাঁর সুপুত্র শ্রী অভিজিৎ বাবু সবসময় সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।

তাঁর বাসায় ভারতের অর্থমন্ত্রী শ্রী পি. চিদাম্বারাম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী প্রণব মুখার্জী যৌথভাবে আমাদেরকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, “ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন জেলা থেকে সংখ্যালঘুরা যাতে ভারতে চলে না আসে সেজন্য তোমরা একটা ব্যাংক করো। যে ব্যাংক সংখ্যালঘুদের ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহজভাবে এক/দুই লাখ টাকা লোন দিয়ে তাদের ছোট-খাট দোকান বা চা-বিস্কিটের দোকান বা হাটবাজারে কাঁচা বাজার বসানোর কাজে ব্যাপৃত রেখে তাদেরকে বাংলাদেশে আটকে রাখবে। সে সাথে এই ব্যাংকটি থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহান শহীদ পরিবারের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সরবরাহ করবে, যাতে তারা স্বচ্ছ্বল হয়ে উঠতে পারে।”

এ বিষয়টি শ্রী প্রণব মুখার্জী ভারত ও বাংলাদেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অবহিত করেন বলে জানি। সে মোতাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক” এর অনুমোদন দেন, যার অর্ধেক সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচালক রাখার মূল সিদ্ধান্ত দেন তাঁরা। কিন্তু সবই গরল ডেল!

বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শুভার্থী প্রণব মুখার্জী ও শ্রী চিদাম্বারাম বাংলাদেশের স্বার্থে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উপদেশ দিয়েছিলেন, তার বিপরীতটা হয়েছে। যে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উক্ত ব্যাংকটির অনুমোদন দেন, সেটা একটি পারিবারিক ব্যাংকে পরিণত হয়েছে এবং সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে মাত্র দু’জন পরিচালক নেয়া হয়েছে! সংখ্যালঘু ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের অভিভাবকতূল্য পরম শুভার্থী প্রণব বাবুর এবং শ্রী চিদাম্বারামের স্বপ্ন, দিবাস্বপ্নে পরিণত হয়েছে!

শ্রদ্ধেয় প্রণব বাবু যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি হন, তখন আমরা যতবার রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছি, তিনি সাদরে আমাদের অভ্যর্থনা দিয়েছেন ও আপ্যায়ন করেছেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের খবরাখবর জানতে চাইতেন। বিশেষ করে, মহান শহীদ পরিবারের খবর খুব আন্তরিকতার সাথে জানতে চাইতেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের স্বচ্ছ্বলতার বিষয়ে বিশেষ করে আগ্রহভরে খুঁটিয়ে, খুঁটিয়ে জানতে চাইতেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহান শহীদ পরিবারের জন্য তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহ ও পরম সদিচ্ছা লক্ষ্য করে আমাদের চোখ ছলছল করে উঠতো।

২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর তাঁর ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমি ও আমার সহধর্মিনী শেখ রেহেনা দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি ঐতিহাসিক রাষ্ট্রপতি ভবনে আমাদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন। তিনি আমার সহধর্মিনী শেখ রেহেনাকে আপন উদারতার অসীম স্নেহ মমতার চোখে দেখতেন এবং বলতেন, “আমার মেয়ে শর্মিষ্ঠর মতো বাংলাদেশের রেহেনা আমার আরেকটি মেয়ে।”

রাষ্ট্রপতি পদ থেকে ২৫শে জুলাই ২০১৭ সালে অবসরের এক মাস পূর্বে আমার বিনীত অনুরোধে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি আমাকে ২ দিন ধরে ভেঙ্গে ভেঙ্গে সময়ে বড় একটি সাক্ষাৎকার দেন। যার জন্য আমি ২০০৯ সাল থেকে, অর্থাৎ তিনি যখন অর্থমন্ত্রী, তখন থেকে অনুরোধ করে আসছিলাম। সময়ের অভাবে পূর্বে দিতে পারেননি। কিন্তু তিনি আমাকে বলেছিলেন সাক্ষাৎকারটি চূড়ান্ত করে সেটা তাঁকে দেখিয়ে নিতে। আমি নির্দেশ মতো রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁর সহকারী একান্ত সচিব কলকাতার শ্রী প্রদ্যুৎ গুহের মাধ্যমে সেটা তাঁকে দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমি সেটা ফেরৎ পাইনি। তবে মূল সাক্ষাৎকার আমার কাছে রক্ষিত আছে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর জন্য সংরক্ষিত বর্তমানে ১০ নং রাজাজী মার্গের ভবনে ২০১৭ সাল থেকে বসবাস করছেন।

আমার সহধর্মিনী শেখ রেহেনা ও আমার সুপুত্র হাবিব-ই-আকবরসহ এ বাসাতেও তাঁর সাথে আমি বহুবার সাক্ষাৎ করেছি। তিনি আমাকে দেয়া তাঁর সাক্ষাৎকার ছাপিয়ে দেবার জন্য মৌখিক অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। উক্ত সাক্ষাৎকারের ঐতিহাসিক মূল্য অনুধাবন করে আমি বই আকারে ছাপানোর জন্য আগামী প্রকাশনীকে সেটা দিয়েছি।

উক্ত সাক্ষাৎকারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক এবং বাঙালি জাতির মুক্তিদূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে পরম শ্রদ্ধাভরে তিনি বহু মূল্যবান ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার পূণ্যময় শ্রদ্ধার্ঘের একটি উদ্ধৃতি এখানে প্রকাশ করার ব্যাকুলতা থেকে নিজকে বিরত করতে পারলাম না। সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রণব বাবু বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পূণ্যময় চিত্তে মহাভারত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “ভগবান কখনো মানব জাতির মুক্তির জন্য মানবের মাঝে ঋষি, সন্ন্যাসীবেশে মর্তে আগমন করেন। কখনো মানবরূপেও মর্তে আগমন করেন। সে মানবেরা হন জ্যোতির্ময় ও অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। শুণ্য থেকে তাঁরা মহত্তম দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেন”।

উক্ত উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ দুই পুণ্যময় গুণাবলীর আশ্চর্য মিলন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে। তাই তিনি সৃষ্টি করলেন বাংলাদেশ, যার কোন সম্ভাবনা তিনি ব্যতিত কেউ কোনদিন এই ভূখন্ডে কল্পনাও করেননি। তাঁর চলার পথের ধূলিকণা শিরে ধারণ করে প্রতি প্রভাতে ও সায়াহ্নে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা হবে অভাবনীয় এবং বাঙালি জাতি হবে সর্বকালের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ জাতি। সর্বশ্রেষ্ঠ বীরের জাতি। সেই বীরের জাতির বিজয় রথের দিকে তাকিয়ে থাকবে বিশ্ব। সেই বিজয় রথে লেখা রবে একটি পুণ্যময় ও জ্যোতির্ময় নাম—শেখ মুজিবুর রহমান।”

৩০ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের প্রতি প্রণব বাবুর অসীম ভালবাসা বহু বহুবার প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলাদেশের মহান শহীদ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর বলিষ্ঠ সমর্থন বহু বহুবার প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী বাঙালি জাতির জন্য তাঁর অন্ধ, অফুরন্ত সমর্থন বহু বহু সংকটে প্রত্যক্ষ করেছি।

পরম দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ যখন দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের পরম হিতৈষির জীবন সঙ্কটময়। তখন বাংলাদেশের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমার চোখও অশ্রুসজল হয়ে উঠছে। তাঁর সুপুত্র অভিজিৎ মুখার্জীর সাথে গত ২/৩ দিন কথা হচ্ছে। আমরা তাঁর রোগ মুক্তির জন্য প্রার্থণা করছি। তাঁর বোন শ্রীমতি শর্মিষ্ঠা মুখার্জীকে ফোন করে পেলাম না। আমাদের উদ্বেগের ও রোগ মুক্তির জন্য প্রার্থণার কথা জানিয়ে তার মোবাইলে মেসেজ দিলাম। শ্রীমতি মুখার্জী আমার মেসেজের উত্তরও দিলেন। বৃহস্পতিবার ১৩ই আগস্ট আবার বন্ধু অভিজিৎ বাবুকে ফোন দিলাম। তিনি আশ্বস্ত করে বললেন যে, বাবার অবস্থা একটু ভালো। তিনি নিজে নিজে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। তাঁর কথা শুনে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর সম্পূর্ণ রোগ মুক্তির জন্য কায়মনো বাক্যে প্রার্থণা করলাম। দেশব্যাপী বীর মুক্তিযোদ্ধারাও একই প্রার্থণা করছে বলে অভিজিৎ বাবুকে জানালাম।

বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সমর্থক ও শুভার্থী শ্রী প্রণব মুখার্জী, তোমাকে অভিবাদন জানাই। বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহান শহীদ পরিবারের সর্বোচ্চ শুভাকাঙ্খী ও হিতাকাঙ্খী শ্রী প্রণব মুখার্জী, তোমাকে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সেল্যুট জানাই। তুমি দীর্ঘজীবি হও। তুমি শতায়ু হয়। বাঙালি জাতির হে পরম বন্ধু, হিতৈষি তুমি শতায়ু হও। হও আরো দীর্ঘজীবী।

 

মুসা সাদিক : স্বাধীন বাংলা বেতারের ওয়ার করেসপন্ডেন্ট এবং সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

infomusabd@gmail.com

উপরের ছবি: ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জীর সান্নিধ্যে সহধর্মিনী শেখ রেহেনাসহ লেখক

Print Friendly

Related Posts