লায়ন অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ
সাধারণ মানুষকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ভ্রমণ করতে হলে টিকিট কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট না কেটে কোনো উপায় নেই। এর নিরসন কি ও কবে? এভাবেই কি আমরা টিকেট চোরাকারবারিদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবো? এর জন্য দায়ী কারা?
টিকিট কালোবাজারিরা টিকিট সংগ্রহ করে কালোবাজারে বেশি দামে বিক্রি করবে এটা তাদের ব্যবসা, এটা তাদের ধর্ম। কিন্তু এদের প্রতিহত করার জন্য যাদের দায়িত্ব তারা কি করছেন? রেলওয়ে বোর্ড, রেলওয়ে ডিপার্টমেন্ট, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার – এদের করণীয় ও দায়িত্ব কি? তাদের দায়িত্ব কি শুধু বসে বসে এসব দেখে আনন্দ উপভোগ করা, নাকি কালোবাজারিদের কাছ থেকে হিস্যা বুঝে নেওয়া, নাকি বসে বসে আঙ্গুল চোষা?
আমি দিনাজপুর থেকে ঢাকা যাবো ট্রেনে। রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাউন্টার বন্ধ। সব টিকিট কাটতে হবে অনলাইনে। পাঁচ দিন পূর্ব রাত ১২টা ১মিনিট থেকেই পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পার্বতীপুরের কোটা থেকে টিকিট কাটতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু পাঁচ দিন পূর্ব থেকেই কোন টিকিট নেই। আমার টিকিট খুবই দরকার। সেজন্য দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে অনেকের কাছে অনেক অনুরোধ করলাম, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। সবার একই কথা কাউন্টারে কোনো টিকিট দেওয়া হয় না, সব টিকিট অনলাইন থেকে ক্রয় করতে হবে। এমন সময় হঠাৎ করে একজন অচেনা লোক আমার পাশে এসে আমাকে বল্লো, কোন্ ক্লাসে কবেকার টিকিট দরকার? আমি তারিখ উল্লেখ করে বল্লাম, যে কোনো ক্লাসে হলেই হবে। সে বল্লো আপনার কোন্ ক্লাসের টিকিট দরকার সেটা বলেন? আমি বল্লাম, এসি ক্লাস হলে ভালো হয়। সে বল্লো ১,৫০০/- টাকা দেন।
বিবেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলো। যেহেতু সব চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি এবং আমাকে ঢাকায় যেতেই হবে, সেজন্য বিবেকযুদ্ধে পরাজিত হয়ে শেষাবধি রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু তাকে আমি চিনি না, কিভাবে তাকে ১,৫০০/- টাকা দেই – এই চিন্তায় পড়ে গেলাম। এক দোকানি বল্লেন, চিন্তার কোন কারন নেই, আপনি তাকে বিশ্বাস করতে পারেন, এটা তার ব্যবসা। মিনিট দশেক পরে সে আমাকে টিকিট এনে দিলে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবলাম। আমরা কোথায় বাস করছি? এর কি কোনো নিরসন নেই? এভাবেই কি চলতে থাকবে? এসব কি রেল কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রনালয় জানে না? কখন জানবে? কবে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি তাদের গোচরীভূত হবে ও কর্ণকুহরে প্রবেশ করবে?
৩০ লক্ষ শহীদ, ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম, সাড়ে তিন হাজারের বেশি বধ্যভূমিতে লাখো লাখো দেশপ্রেমিক মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যা করে পুতে রাখা হয়েছিল এই দেশের স্বাধীনতার জন্য। তাঁদের এই মহান ত্যাগ, সম্ভ্রমহানী ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই পবিত্র স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও কোনো পরিবর্তন দেখতে পাবো না কেনো?
যাঁরা এ দেশের মানুষের পরিবর্তন চেয়ে দেশটিকে সোনার বাংলা হিসেবে দেখার জন্য স্বেচ্ছায় হানাদারদের উপর ঝাপিয়ে পরে নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন – তাঁদের আত্মা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের আত্মাগুলো এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখে কতই না কষ্ট পাচ্ছেন!
যাঁরা আমাদের সুখ-শান্তি ও হাসির জন্য নিজের জীবনকে বাজি রেখে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের জন্য অকাতরে তাঁদের জীবন বিসর্জন করে গেছেন, অথচ তাঁদের আত্মাকে এভাবে কষ্ট দেওয়া কি আমাদের ঠিক হচ্ছে? এর উত্তর কি? কার কাছে আছে এর উত্তর?
লায়ন অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ : সিনিয়র আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশ
প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটি