‘বাঘিনী’ এখন খাঁচায়!

‘বাঘিনী’ এখন খাঁচায়! বাঘিনীকে খাঁচাবন্দি করতে টোপ লাগে। আর উত্তর-পূর্ব ভারতের এই ‘বাঘিনী’কে লোভ দেখিয়ে খাঁচায় পুরতে দিল্লি-কলকাতা যাওয়া-আসার এক জোড়া বিমান টিকিটকেই টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। কিন্তু কে এই বাঘিনী?

বাঘিনীর নাম মনোরঞ্জনা সিংহ। আলোচিত সারদা কেলেঙ্কারির অর্থ আছে তারও পেটে। স্বাভাবিকভাবেই সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়তে হয় তাকে। এই জেরার সময় নিজেকে তিনি বাঘিনী বলেই জাহির করতেন। বলতেন, ‘আই অ্যাম টাইগ্রেস!’ অর্থাৎ তিনি সঘোষিত বাঘিনী। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের।

প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের সঙ্গে সাংবাদিক মনোরঞ্জনার বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। ২০০৮ সালে নিজের ছেলেকে নিয়ে চলে এসেছিলেন তিনি।

চুক্তিপত্র অনুযায়ী সারদার ‘বেঙ্গল মিডিয়া’র কাছ থেকে মাসে ১৫ লাখ রুপি করে বেতন নিতেন মনোরঞ্জনা। সঙ্গে বিলাসবহুল বাড়ি, চালকসহ গাড়ি, অন্যান্য সুবিধা এবং ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সফরের সব খরচ।

সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে লেখা চিঠিতে মনোরঞ্জনা জানিয়েছেন, গোয়াহাটি বিমানবন্দরেই সারদা-কর্তার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। তার পরেই যৌথভাবে সংবাদ চ্যানেলের ব্যবসার পরিকল্পনা।

সিবিআইয়ের এক তদন্তকারী জানান, জেরার সময়ে গোয়েন্দাদের ঘোল খাইয়ে দিয়েছেন চতুর এই নারী। দিল্লিতে কংগ্রেস ও বিজেপির প্রথম সারির অনেক নেতার সঙ্গে মনোরঞ্জনার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় একাধিকবার তা উল্লেখ করে তদন্তকারীদের চাপে রাখতেন তিনি। সেই সঙ্গে বারবার একটা কথাই বলতেন, ‘আমার সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে আসবেন না। রিমেমবার আই অ্যাম টাইগ্রেস!’

সেই বাঘিনী এভাবেই গত বুধবার খাঁচাবন্দি হয়। এবং তার জন্য কম ঘাম ঝরাতে হয়নি সিবিআইকে। এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, সব তথ্য যাচাই করে আদলতগ্রাহ্য প্রমাণ হাতে আসার পরই মনোরঞ্জনাকে গ্রেফতারের পরিকল্পনা করা হয়। বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদের পর মনোরঞ্জনা কিছুটা আন্দাজ করেছিলেন তিনি গ্রেফতার হতে পারেন। তাই বারবার কালক্ষেপণ করছিলেন।

বাঘিনীর বর্তমান ঠিকানা জেল নয়, এসএসকেএম হাসপাতালের কেবিন। তিনি ‘অসুস্থ’। আত্মীয়দের সংস্রবে থাকতে চান বলে এখন আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারক সৌগত রায়চৌধুরীর কাছে আরজি জানিয়েছেন মনোরঞ্জনা। আদালত সূত্রে খবর, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোনো আত্মীয়কে তার কাছে থাকার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন তিনি। তবে মনোরঞ্জনার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

 

সারদার প্রায় ৪০ কোটি টাকা (রুপি) তছরুপের অভিযোগে মনোরঞ্জনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারদার ‘বেঙ্গল মিডিয়ার’ সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ওই টাকায় উত্তর-পূর্ব ভারতে ‘রাজধানী’ ও ‘ফ্রন্টিয়ার’ নামে টিভি ও রেডিও চ্যানেল শুরু হয়েছিল, চুক্তিপত্র অনুযায়ী যার চেক সই থেকে সংবাদ পরিবেশন সব ক্ষমতাই ছিল মনোরঞ্জনার হাতে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts