শাহ মতিন টিপু
‘তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া, তুমি বাংলা ছাড়ো’ -প্রখ্যাত ‘বাংলা ছাড়ো’ কবিতার জনক সিকান্দার আবু জাফরের ৪৭তম প্রয়াণ দিবস আজ।
১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং বনানী কবরস্থানে তিনি সমাহিত হন।
সিকান্দার আবু জাফর একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, নাট্যকার, ছড়াকার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, গীতিকার, সম্পাদক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠকসহ নানাবিধ প্রতিভায় আলোকিত ছিলেন। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রকাশিত তার ‘বাংলা ছাড়ো’ কবিতা এবং পরবর্তিতে ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ গানসহ অসংখ্য সৃষ্টিকর্ম বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে পথ দেখিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ‘বাঙলা ছাড়ো’, ‘জনতার সংগ্রাম’ কিংবা ‘আমার অভিযোগ’-এর মতো রচনা নানাভাবে প্রেরণা জুগিয়েছে।
তিনি ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
গত বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘কবি সিকান্দার আবু জাফর : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন বহুমুখী মননের মানুষ। অঙ্গীকার ও মহত্বের দিক থেকে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার যথেষ্ট মিল রয়েছে। তার কবি ও গীতিকার সত্ত্বা উৎসর্গিত হয়েছে জনমানুষের মুক্তির আবাহনে।
কবি সিকান্দার আবু জাফর যে শুধু গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, নাটক, সম্পাদকীয় গদ্য রচনা করেছেন তাই নয়, শিশুদের জন্যও রয়েছে তার নানামাত্রিক গদ্য। তার গদ্যরচনার পরিধি কবিতার চেয়ে বেশি বৈ কম নয়। তারপরও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি এবং পাঠকপ্রিয় কবি। এমনকি একজন উচ্চাঙ্গের গীতিকার হিসেবেও সফল। তার জীবনের সেরা কীর্তি ‘সমকাল’ পত্রিকা সম্পাদনা। এই পত্রিকার পাতায় পাতায় তাঁর রুচি ও সাহসের পরিচয় মুদ্রিত আছে।
তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ: উপন্যাস পূরবী (১৯৪১), নতুন সকাল (১৯৪৬); ছোটগল্প মাটি আর অশ্রু (১৯৪২); কবিতা প্রসন্ন শহর (১৯৬৫), তিমিরান্তিক (১৯৬৫), বৈরী বৃষ্টিতে (১৯৬৫), বৃশ্চিক-লগ্ন (১৯৭১), বাংলা ছাড়ো (১৯৭১); নাটক সিরাজ-উদ-দৌলা (১৯৬৫), মহাকবি আলাউল (১৯৬৬); সঙ্গীত মালব কৌশিক (১৯৬৬)।
আবু জাফর অনুবাদক হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। তার কয়েকটি অনূদিত গ্রন্থ: যাদুর কলস (১৯৫৯), সেন্ট লুইয়ের সেতু (১৯৬১), রুবাইয়াৎ : ওমর খৈয়াম (১৯৬৬) ইত্যাদি। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৬) এবং একুশে পদক (১৯৮৪, মরণোত্তর) লাভ করেন।