আলম রায়হান
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে চমক দেখিয়ে প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ৩২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি, শেখ রেহানার মেয়ে। বিশ্ব মিডিয়ায় অলোচিত নাম টিউলিপ, ছবি তোলার জন্য অসংখ্য ক্যামেরার ঝলকানী তাকে ঘিরে। এই হচ্ছেন আজকের টিউলিপ সিদ্দিক। এই টিউলিপ ৮৭ সালে ক্যামেরা দেখে বলেছিলো, ও! আপনারা ছবি তুলবেন।
তখন আমি সাপ্তাহিক সন্দ্বীপে কাজ করি। আমাকে এসাইনমেন্ট দেয়া হলো শেখ রেহানার সাক্ষাৎকার ভিত্তিক রিপোর্ট তৈরী করার। কখনো রাজনীতি করবো না- শেখ রেহানা” এই শিরোনামে শেখ রেহানার সাক্ষাৎকার ভিত্তিক আমার প্রচ্ছদ রিপোর্টটি ছাপা হয়েছিলে ১৯৮৭ সালের ১৬ মার্চ সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ-এ।
তখন পত্রিকাটির বয়স দেড় বছরের একটু বেশী। সাক্ষাৎকারের জন্য আমি শেখ রেহানাকে ফোন করি ১ মার্চ(১৯৮৭)। তিনি প্রথমে সাক্ষাৎকার দিতে রাজী হলেন না। কিন্তু আমার আজও মনে আছে, সাপ্তাহিক পত্রিকার অজানা সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি সামান্যতম অবজ্ঞা করেননি। সে সময় আমার মুর্খ সাহস অথবা শেখ রেহানার নরম আচরনের কারণেই হোক, আমি তাকে নাছোর বান্দার মতো অনুরোধ করলাম। রিপোর্টারের কৌশল হিসেবে প্রকারন্তরে এমনও ধারণা দিলাম, তার সাক্ষাৎকার দেয়া না দেয়ার উপর আমার চাকুরী থাকা-না থাকা অনেকখানি নির্ভর করে। সম্ভবত আমার ক্ষতি হবার কথা বিবেচনা করেই তিনি সাক্ষাৎকার দিতে রাজী হলেন। তবে শর্ত দিলেন, কোন রা-জ-নৈ-তি-ক প্রশ্ন করা যাবে না। আমি তাতেইে রাজী।
শেখ রেহানা কাছ পর্যন্ত পৌছানো ছিলো আমার জন্য কঠিন কাজ। এর পর লক্ষ্যে কিভাবে পৌছতে হয় তার ট্রেনিং তখনই মোটামুটি হয়েগিয়েছিলো।
শেখ রেহানার মুখোমুখি হবার পর্বটি সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ থেকেই উদৃত করি, পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুসারে তাঁর বাসায় যাই ৩ মার্চ সন্ধ্যা সাতটায়। দোতলায় উঠে দরজার বেল বাজাবার পর একজন এসে আমাদের পরিচয় জেনে ভিতরে গেলো । এসময় চার পাঁচ বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে এসে দাড়ালো নেটঘেরা দরজার ওপারে। ক্যামেরা দেখে বললো, ও আপনারা ছবি তুলবেন তো। ক্যামেরাম্যান ছিলেন ফরিদ বাশার।
ফুটফুটে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম, তোমার নাম কি?
: টিউলিপ।
:কি?
: টিউলিপ, টিউলিপ!
এ সময় এলো ওর বড় ভাই ববি। টিউলিপের চেয়ে বছর দুয়েকের বড় হবে। ববি দরজা খুলে দিলো। এর মধ্যে শেখ রেহানা চলে এলেন। প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যার মুখোমুখি হলাম। তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন বসার ঘরে। একটু বসুন আসছি- বলে বসার ঘর থেকে বের হতে গিয়ে আবার ঘুরে দাড়ালেন। বললেন, কোন রা-জ-নৈ-তি-ক কথা কিন্তু হবে না।
: ঠিক আছে কোন রাজনৈতিক কথা হবে না।
বলাবাহুল্য, সেদিন শেখ রেহানার সঙ্গে রাজনৈতিক অনেক কথা হয়েছে। আজকের আলোচ্য বিষয় শেখ রেহানা নন। প্রসঙ্গ হচ্ছে টিউলিপ। ৮৭ সালে যে শিশু টিউলিপকে দেখেছি সে এখন বিশ্ব ব্যক্তিত্ব। এর মধ্যে তার খালা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন তৃতীয় মেয়াদে। মাঝখানে স্বল্প মেয়াদে নির্বাচনকালীন সরকারেও প্রধান ছিলেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী, শেখ রেহানার মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনী- এর ধারাহিকতায় কতভাবেই টিউলিপকে চিনতে পারতো দেশের মানুষ। যেমনটি হয় আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানদের। কিন্তু হতাশার এই ধারার বিপরিতে দাঁড়িয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এখন বিশ্বনন্দিত নাম।
এ থেকে কী শিক্ষা নেয়া উচিত নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক পরিবারগুলোর!