হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে জয়দেবপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত এক যুগ ধরে চলছে বাস র্যাাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। এ কারণে প্রতিবছরই ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী ঘরমুখো মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
এ বছরে বিআরটি প্রকল্পের চলমান উন্নয়ন কাজ অনেকটা সম্পন্ন হলেও মূল সড়কের ওপর নির্মাণসামগ্রী, ক্রেন ও জিনিসপত্র, যন্ত্রাংশ যত্রতত্র ফেলে রাখায়, বিভিন্ন অংশে কাজ চলমান থাকায় এবং বৃষ্টিতে পানি জমার ফলে এবারও ভোগাবে ঈদযাত্রায়।
ঢাকা ও গাজীপুর জেলার সংযোগ সেতু হলো টঙ্গী ব্রিজ। ঢাকা থেকে বের হতে ২৩ জেলার মানুষের ঢল নামে এই পথে। কিন্তু সরু ব্রিজ ও খানাখন্দ, সংকুচিত রাস্তা, বৃষ্টিতে পানি জমার ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা করছেন যাত্রী, চালক ও স্থানীয়রা। তবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের আশ্বাস ঈদযাত্রায় এই মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তির শঙ্কা নেই।
স্থানীয় দোকানদার ও চালকেরা যানজটের জন্য কয়েকটি স্থানকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। তারমধ্যে টঙ্গী ব্রিজ, টঙ্গী বাজার, মিলগেট, কুনিয়া, ভোগড়া বাইপাস ও চন্দনা চৌরাস্তা।
এসব জায়গায় সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গী ব্রিজ থেকে স্টেশনরোড পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা। ভাঙাচোরা সংকুচিত এ সড়ক দিয়ে চলছে শত শত পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন। বিআরটি প্রকল্পের টঙ্গী অংশে সড়কের ওপরে উড়ালসড়ক এবং নিচে কার্পেটিং এখনো অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের কোথাও তিন লেন, কোথাও আবার দুই লেনে পরিণত হয়েছে। যার ফলে এখনই যানজট ও ধীরগতি লেগেই থাকে। টঙ্গী ব্রিজ থেকে বাটা পার হয়ে সেনাকল্যাণ মার্কেটের সামনে বৃষ্টি হলে জমে যায় পানি, মুহূর্তের মধ্যে তৈরি হয় ছোটবড় গর্ত। কখনো কখনো এক লেনে চলে গাড়ি, অন্য অন্য লেনে প্রকল্পের কাজ।
এছাড়াও কামারপাড়া সড়কের মাথা হতে মিলগেট হয়ে চেরাগআলী পর্যন্ত সড়কের ওপর নির্মাণসামগ্রী, ক্রেন ও সাটারিংয়ের জিনিসপত্র যত্রতত্র ফেলে রাখায় সেখানে উভয়মুখী দুই লেনে গাড়ি চলাচল করছে। এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি হওয়ার সম্ভাবনা এখানেও।
অপরদিকে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কুনিয়া পর্যন্ত সড়কের মাঝখানে বিআরটি স্টেশনের কাজ চলায় সেখানেও সংকুচিত হয়ে আছে মূল সড়ক। ফেলে রাখা হয়েছে বালু। অনেক স্থানে বিআরটি’র ফ্লাইওভারের ওপরের স্টেশনে ওঠার জন্য লিফট বসানোর কাজও চলমান। যার ফলে ঢাকামুখী সড়ক সংকুচিত হয়ে যানচলাচল ধীরগতি লেগেই থাকে।
এবারের ঈদযাত্রায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণের মধ্যে রয়েছে ভোগরা বাইপাস। খানাখন্দ বা প্রকল্পের কাজ চলমান না থাকলেও বৃষ্টি হলে বেশ ভোগাবে। এখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই মহাসড়কে কোমর পর্যন্ত পানি জমা হয়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রায় যদি বৃষ্টি হয় তবে যানজট প্রকট আকার ধারণ করবে। এদিকে চান্দনা চৌরাস্তায় চলছে পুরোদমে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। এই কাজ চলমান থাকায় যানবাহন প্রবেশ ও প্রস্থানের রাস্তা হয়েছে সংকুচিত। পাশাপাশি চান্দনাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু’পাশে ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী দোকানপাট বসানোয় যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। যার ফলে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার ( ট্রাফিক) আলমগীর হোসেন বলেন, টঙ্গী ব্রিজ, টঙ্গী বাজারসহ কিছু অংশে সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছি, তারা এটি ঈদের আগেই শেষ করবে। এছাড়াও ভোগরা বাইপাসে রাস্তাটি নিচু। যার ফলে বৃষ্টি হলে পানি জমা থাকে। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এই পানি জমার আরেকটি কারণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এখানে প্রচুর ময়লা জমা হয়। এজন্য আমরা ড্রেন পরিস্কারের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।