সামাজিক স্টিগমার কারণে নারী মাদকনির্ভশীলরা চিকিৎসা গ্রহণে অনাগ্রহী
সামাজিক স্টিগমার কারণে নারী মাদকনির্ভশীলরা চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহী। দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারীর মাদক গ্রহণকারীর হার আশংকাজনক ভাবে বাড়ছে। নারীদের মাদক গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা সমাজে এক সময় ভয়ংকর রূপ নিবে।
নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসায় সফলতার সাথে ৯ বছর পেরিয়ে ১০ম বছরে পদার্পনে বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে শ্যামলীস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আয়োজিত প্রতিষ্ঠানটির সভাকক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ জাফরুল্ল্যাহ কাজল এ কথা বলেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আক্তারুজ্জামান সেলিম, স্বাস্থ্য সেক্টরের সহকারী পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডাঃ নায়লা পারভীন, সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখী গাঙ্গুলী।
এ সময় স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪৭ জন নারী মাদক নির্ভরশীল, মানসিক ব্যাধি ও আচরণগত বিষয়ক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১২৯ জন রোগী পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণ করে। চিকিৎসা সেবা গ্রহণকরী নারীদের মধ্যে ৩৩% ইয়াবা গ্রহণকারী, ২৮% গাঁজা, ১৬% ঘুমের ওষুধ, ১৫% একই সাথে বিভিন্ন মাদক গ্রহণকারী, ২% মদ, ২% শিরায় মাদক গ্রহণকারী বাকিরা অন্যান্য মাদক গ্রহনকরী। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়া ৩৪%, মুড ডিজ্অর্ডার ৩০%, বাইপোলার ১২%, ডিপ্রেশন ১০%, ওসিডি ৬% বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল।
এই কেন্দ্রে কেবল নারীদের দ্বারাই নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। যেহেতু মাদকনির্ভরশীলতা একটি অসুস্থতা বিধায় মাদকমুক্তরা পুনরায় মাদক গ্রহণ করতে পারে পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে। সেক্ষেত্রে সমাজের সকল পর্যায় থেকে সচেতনতার কাজ করতে হবে। মাদক গ্রহনের কারন হিসেবে দেখা যায় কৌতুহলবশবর্তী হয়ে, মাদক গ্রহকারী বন্ধুদের চাপ, একাকিত্ব, পরিবারের অন্য সদস্য বা বয়ফ্রেন্ড মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত থাকলে, বিষন্নতা, হতাশাগ্রস্থ হলে, অতিরিক্ত রাগ-জেদ ইত্যাদি করনে মাদক ব্যবহার করে থাকে।পারিবারিক ও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে নারী নির্ভরশীলদের বিষয়টি আমাদের দেশে এখনো প্রায়শঃই প্রকাশ্যে আসে না, ফলে এ সমস্যাটির সমাধান সহজ হয় না। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নারী নির্ভরশীলদের চিকিৎসায় কাজ করছে।
এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের যুগ্ম পরিচালক কে এস এম তারিক, সহকারী পরিচালক মোখেলেছুর রহমানসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মাদকাসক্ত থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি এবং চিকিৎসাধীনদের পরিবারবর্গ।
ঢাকা আহছানিয়া মিশন থেকে চিকিৎসা গ্রহণকারী ৬৪৭ জন রোগীর মধ্যে ৬৫% চিকিৎসার মেয়দ পূর্ন করেছে, মেয়াদ পূর্ন করা রোগীদের মধ্যে ৪০% মাদকমুক্ত সুস্থ জীবন যাপন করছে এবং নিয়মিত সেন্টারের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন, মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছে ২৪% এবং ১৭% রিল্যাপ্স (পুনরায় মাদক গ্রহণ) করেছে, .৯% মৃত্যুবরণ করেছে, বিভিন্ন কারনে ৪% রোগীকে রেফার করা হয়েছে, এর মধ্যে ২% শুধু ১৪ দিনের ডিটক্সিফিকেশন করেছে। ৬৪৭ জনের মধ্যে ৫১% জন সেন্টারের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখে নাই এবং ৪% বর্তমানে সেন্টারে চিকিৎসারত আছেন। যারা সেন্টারের সাথে সম্পৃক্ত নেই তাদের অনেকে সুস্থ আছে, বিদেশ গেছে এবং বাকিরা লোক লজ্জার ও সামাজিক স্টিগমার কারণে চিকিৎসা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখে নাই। এছাড়া ৬৪৭ জন রোগীর মধ্য শুধু মাত্র মানসিক সমস্যার করনে চিকিৎসা নিয়েছে ১৩৩ জন নারী।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে এপ্রিল মাসে থেকে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি মাদকাসক্তি জনিত সমস্যা, মানসিক সমস্যা ও আচরণিক সমস্যাগ্রস্থ নারীদের চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে মাদকাসক্ত নারীদের জন্য বিজ্ঞান ভিক্তিক চিকিৎসা প্রদান করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত ৪টি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০০৪ সালে গাজীপুর, ২০১০ সালে যশোর, ২০১৪ সালে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ঢাকা এবং ২০২১ সালে মাসে হেনা আহমেদ মনোযত্ন কেন্দ্র, মুন্সিগঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে।
সূত্র: তরিকুল ইসলাম, কমিউনিকেশন অফিসার স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন