পটিয়াসহ অর্ধ-শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ঈদ উল ফিতরের নামাজ আদায়
দিনাজপুর : প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দিনাজপুর সদর উপজেলাসহ ছয়টি উপজেলায় শুক্রবার (২১ এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিদের একটি অংশ।
দিনাজপুর শহরের চারুবাবুর মোড়স্থ পার্টি সেন্টার, চিরিরবন্দর উপজলার রাবার ড্যাম এলাকার কয়েকটি গ্রাম, কাহারোল উপজেলা জয়নন্দ ও ১৩ মাইল গড়েয়া এলাকা, বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা বাজার জামে মসজিদ, জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি মির্জাপুর জামে মসজিদ এবং বিরল উপজেলার বালান্দোর ও ভারাডাঙ্গী গ্রাম, বোচাগঞ্জ উপজেলার তেতরা গ্রামে, ও নবাবগঞ্জ উপলোয় আগাম ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়।
শুক্রবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে দিনাজপুর শহরের চারুবাবুর মোড়স্থ পার্টি সেন্টারে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন দিনাজপুর শহর ও আশপাশের কয়েকটি এলাকার মুসল্লিরা। নামাজে লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কয়েকজন মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। এই জামাতে পুরম্নু, নারী ও শিশুসহ তিন শতাধিক মানুষ অংশগহণ করেন। ইমামতি করেন দিনাজপুর বিরল উপজেলার ফ্যামলি কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক।
দিনাজপুরে ২০০৭ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন মুসলমানদের একটি অংশ। প্রথমে মুসল্লির সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে ২০২৩ সালে এসে তা বেড়ে তিন শতাধিক হয়েছে।
চট্টগ্রাম : সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়াসহ অর্ধ-শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ঈদ উল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন আজ শুক্রবার ।
সাতকানিয়ার মির্জারখীল দরবার শরীফের মুরিদগণ সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে অন্যান্য বছরের মতো এবারও এক দিন আগে ঈদ উল ফিতর উদযাপন করেছেন। আর এ দরবার শরীফের মুরিদরা সৌদি আরবের সাথে সঙ্গতি রেখে একদিন আগে রোজা শুরু করেছিলেন।চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দরবার শরীফের মুরিদরা ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য দরবার শরীফে এসেছেন।
মির্জারখীল দরবার শরীফ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯ টায় দরবার শরীফের মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেন দরবার শরীফের পীর হযরত মাওলানা ড. সৈয়দ মকছুদুর রহমান জাহাগীরি। ২য় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সকাল ১০টায় এতে ইমামতি করেন সৈয়দ মাওলানা হামিদ শাহ জাহাগীরি।
এদিকে, সাতকানিয়ার মির্জারখীল, এওচিয়ার গাটিয়াডেঙা, মাদার্শা, খাগরিয়ার মৈশামুড়া, পুরানগড়, চরতির সুইপুরা, চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হারালা, বাইনজুরি, কানাই মাদারি, সাতবাড়িয়া, বরকল, দোহাজারী, জামিরজুরি, বাঁশখালীর কালিপুর, চাম্বল, শেখেরখীল, ছনুয়া, আনোয়ারার বরুমছড়া, তৈলারদ্বীপ, লোহাগাড়ার পুটিবিলা, কলাউজান, বড়হাতিয়া, এবং পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, রাউজান ও ফটিকছড়ির কয়েকটি গ্রামসহ চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ শুক্রবার ঈদ উল ফিতর উদযাপন করছেন।
এছাড়াও পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যাংছড়ি, কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার কয়েকটি গ্রামে থাকা মির্জারখীল দরবার শরীফের মুরিদরাও শুক্রবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
চাঁদপুর : সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। তবে ওই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের দাবি, সৌদি আরব নয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই তারা ঈদ পালন করে থাকেন।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সকালে জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার টোরা মুন্সিরহাট জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরীফ সংলগ্ন সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসা মাঠে সকাল ১০টায় ঈদের জামাতের ইমামতি করেন সাদ্রা দরবারের পীর মাওলানা আরিফ বিল্লাহ চৌধুরী। এছাড়া সাদ্রা গ্রামে সাদ্রা দরবার শরীফে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন আল্লামা জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী।
সাদ্রার মরহুম পীরের ছেলে মুফতি জাকারিয়া আল মাদানী বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা ঈদ উদযাপন করে থাকি। যার ফলে সর্বপ্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা রাখি এবং ঈদ উদযাপন করি।
আসাদুজ্জামান সুফি ও জাকিরসহ অন্য মুসল্লিরা বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে ঈদ পালন করতেন। আমারও আল্লামা মোহাম্মদ ইসহাকের অনুসারী হিসেবে ঈদ পালন করছি।
সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আল্লামা মোহাম্মদ ইসহাক ১৯২৮ সাল থেকে প্রথম চাঁদ দেখার উপর মিল রেখে ইসলামের সব ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচলন শুরু করেন। মাওলানা ইছহাকের মৃত্যুর পর থেকে তার ৬ ছেলে এ মতবাদের প্রচার চালিয়ে আসছেন।
সাদ্রাসহ ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হলো- হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, দক্ষিণ বলাখাল, শ্রীনারায়নপুর, মনিহার, বড়কুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাসারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর ও দশানী।