শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক একটি অবিস্মরণীয় নাম, এক অসাধারণ ব্যক্তি। মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে শেরে বাংলা আমাদের কাছে চিরস্মরণীয়। জাতি হিসেবে আমরা যে সবাই বাঙালি-এই ঐতিহাসিক সত্যের মূল ভিত্তি তিনিই রচনা করেছেন। এই মহান জাতীয় নেতার ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। জাতি আজ তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।
তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শিক্ষানুরাগী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক হিসেবেও ইতিহাসের পাতায় তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের মিঞা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর, যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আইনসভার সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও তার অবদান ছিল। ১৯৪০ সালে তিনি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি ২১ দফা দাবিরও প্রণেতা ছিলেন।
ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থে ১৯৩৬ সালে কৃষক প্রজা পার্টি (কেপিপি) এবং ১৯৫৩ সালে শ্রমিক-কৃষক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার শোষিত ও নির্যাতিত কৃষক সমাজকে ঋণের বেড়াজাল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে তাঁর উদ্যোগে গঠিত হয় ‘ঋণ সালিশি বোর্ড’। শেরে বাংলা কর্তৃক প্রণীত বঙ্গীয় চাকরি নিয়োগবিধি, প্রজাস্বত্ব আইন, মহাজনি আইন, দোকান কর্মচারী আইনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অবহেলিত কৃষক-শ্রমিক উপকৃত হন।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ কে ফজলুল হক এদেশের কৃষক সমাজের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে আজীবন কাজ করেছেন। কৃষকদের অধিকার আদায়ে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে দরিদ্র কৃষক এবং প্রজাদের স্বার্থ রক্ষায় কৃষি ঋণ আইন এবং প্রজাস্বত্ব (সংশোধনী) আইনসহ বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেন। জমিদারগণ রায়তদের উপর যে আবওয়াব ও সেলামি ধার্য করতেন, তিনি তা বিলোপ সাধন করেন। তাঁর সাহসী নেতৃত্ব, উদার ও পরোপকারী স্বভাবের জন্য জনগণ তাঁকে ‘শেরে বাংলা’ বা ‘বাংলার বাঘ’ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক- এর সঙ্গে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক ঐক্য ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ছিল। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সংগ্রাম করেছেন।