বিশ্ব মা দিবস-২০২৩ ll বাংলাদেশের মা’দের অগ্রকথা

শৌল বৈরাগী


২০০৫ সালে বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষ্যে ডরপ ১০০ মা’কে নিয়ে মাত্র ১০০/২০০ টাকা মাসিক হারে কাঙ্খিত গর্ভবতী মা নির্বাচনে নির্দিষ্ট সঠিকতা রক্ষায় ৭টি শর্তসহ ২৪ মাস মেয়াদে ৬ বিভাগে ৬টি স্থানীয় এনজিওর মাধ্যমে দেশে প্রথম গরীব মা’দের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কার্যক্রম শুরু করে।

কর্মসূচির সফলতা, দীর্ঘদিনের অনুশীলন ও আবেদনের প্রেক্ষিতে দারিদ্র বিমোচনে ভিত্তি হিসেবে কার্যকারিতা আনার লক্ষ্যে সরকার ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এ কর্মসূচি শুরু করে। যা ৩ হাজার ইউনিয়নে ৪৫ হাজার মা’কে ৩ বছর মেয়াদে মাসিক ৩০০ টাকা হারে শতাধিক এনজিওর মাধ্যমে প্রশিক্ষণসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে শুরু হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃত্বকালীন ভাতার সর্বদিকের কলেবর বৃদ্ধি করে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারাদেশে মাসে ৮০০ টাকা হারে ৪ বছর মেয়াদে সকল ইউনিয়ন, পৌরএলাকা ও শহরসহ ১২ লক্ষ মাকে এ ভাতা প্রদান করছেন। মাতৃত্বকালীন ভাতার মেয়াদ শেষ হলে এর পরে মা শিশুদের কি হবে এর উত্তরে ২০০৯-১১ সালে স্পেন সরকার স্প্যানিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সাহায্য সংস্থা-এইসিআইডি এর আর্থিক সহায়তা ও মহামান্য রাণী সোফিয়ার পৃষ্টপোষকতায় ৫ উপজেলায় র্ডপ সরাসরি স্বপ্ন প্যাকেজ চালু এবং সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। স্বপ্ন প্যাকেজ হলো মাতৃত্ব কেন্দ্রিক শিশু সহ স্বাস্থ্যকার্ড, শিক্ষাকার্ড, আবাসন, কর্মসংস্থান এবং সঞ্চয় সম্বলিত হলিস্টিক এপ্রোচে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বটম লাইনিং উন্নয়ন কর্মসূচি।

তথ্যভিত্তিক দৃশ্যমান বাস্তবায়ন ফলশ্রুতিতে সরকার কর্তৃক ডরপকে সহযোগি বাস্তবায়ন সংস্থা হিসেবে রেখে ২০১৪-১৭ সালে মাতৃত্বকালীন ভাতাপ্রাপ্ত মা’দের নিয়ে- চা বাগান, নদীভাঙ্গন, সমতল, গার্মেন্টস, রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব বহনকারী, বাংলাদেশের জন্মস্থান মুজিবনগর, বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গীপাড়া, মাননীয় স্পীকারের পিতৃভূমি চাটখিল সহ ১০ টি উপজেলায় পাইলট আকারে এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন করা হয়।

২০১৮-১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা মরহুম এইচ টি ইমাম সাহেব প্রতিষ্ঠিত পার্থমার্কসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-র মূখ্য সমন্বয়ক জনাব আবুল কালাম আজাদ ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ কে মোক্ষম কর্মসূচি হিসেবে আখ্যায়িত করে সিটি কর্পোরেশন, জেলা শহর, পৌর এলাকা ব্যতিরেকে ৪০০ উপজেলায় এ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করার পরামর্শে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে প্রকল্প দাখিল করা হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্ল্যানিং সেলের পরীক্ষান্তে মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপিত হলেও দূর্ভাগ্যবশত কোভিড-১৯ এর থাবা ও আক্রমন বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করায় এ কর্মসূচি স্থগিত থাকে। নভেম্বর ২০১৯ ঢাকাস্থ ব্র্যাক সেন্টার ইন এ মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী, মাননীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার উর্ধ্বতনদের অংশগ্রহণে মা সংসদ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বপ্ন মা সেরা দশ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় পাইলট ১০ উপজেলার সেরা ১০ স্বপ্ন মা অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের চিত্র এবং তাদের উন্নয়ন পরিবর্তন শুনে ও দেখে উপস্থিত সুধি ও সর্বমহল কর্তৃক প্রশংসিত হয়। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে বহুল প্রচারিত হয়। একই সঙ্গে সিগনেচার ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে স্বপ্ন প্যাকেজ সারাদেশে সম্প্রসারণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ ও আবেদন রাখা হয়।

উপরোক্ত ধারাবাহিকতায় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেষ্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি- আইআইএফসি (এন এন্টারপ্রাইজ অব ইআরডি, অর্থ মন্ত্রণালয়) কর্তৃক মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর ৩০ উপজেলায় মাতৃত্ব ও শিশু কেন্দ্রিক স্বপ্ন প্যাকেজ প্রস্তাবনা ১৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে দাখিল করা হয়।

২ জুলাই ২০২২ ডরপ হোমে জনাব প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, উপাচার্য-ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আইআইএফসি কর্তৃক দাখিলকৃত প্রস্তাবনা, সরকার কর্তৃক অনুমোদন ও প্রাসঙ্গিক কার্যসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে যথাঃ ১. ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেষ্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানী- আইআইএফসি, বাংলাদেশ। ২. বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফাউন্ডেশন, ঢাকা। ৩. ওয়ার্ন্ড ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ (ডবিøউ ইউ বি)। ৪. বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতি- অবসর । ৫. নিরাপদ সড়ক চাই -নিসচা। ৬. ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র- ডরপসহ একটি ফোরাম গঠনের মাধ্যমে যৌথভাবে কর্মকাঠামো-কার্যসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এই ফোরাম গবেষণা , মূল্যায়ন, মনিটরিং ও সরকার-অসরকার ইউনিয়ন-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সমন্বয় করবে। এ প্রেক্ষিতে আইআইএফসি সরকারের সফল ১০ উপজেলায় পাইলটকৃত (২০১৪-১৭ পর্যন্ত) স্বপ্ন প্যাকেজ উপজেলাকে কেন্দ্র করে দাখিলকৃত ৩০ উপজেলায় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জমা প্রস্তাবটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এসডিজি বাস্তবায়নে ১নং এজেন্ডা এন্ডিং পভার্টির লক্ষ্যে পৌঁছাতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আগ্রহ ও ইচ্ছার প্রতিফলন ভিত তৈরি হবে। দেশবাসীর প্রত্যাশা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গরীব দরদী সরকার ২০২৩-২৪ বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এ স্বপ্ন প্যাকেজ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

শৌল বৈরাগী: উন্নয়ন কর্মী।
ইমেইল:saul_boiragee@yahoo.ca

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts