ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী লঞ্চে উঠবে ঈদযাত্রায়

ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৯০টি লঞ্চে তিন লাখ ২৭ হাজার ৮৫৭ যাত্রী বহন করা হবে বলে ধরা হলে একটি লঞ্চে গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৬৪২ জন যাত্রী উঠবে। যদিও কোনো লঞ্চেই দুই হাজারের বেশি যাত্রীধারণক্ষমতা নেই। অনেক লঞ্চের ধারণক্ষমতা এক হাজারেরও নিচে। এই অবস্থায় ঘটতে পারে জনদুর্ভোগ ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।

বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদপূর্ব পর্যবেক্ষণ ও জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

রোববার (১৮ জুন) সংগঠনের সভাপতি হাজি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।

এছাড়া এবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে ভরা দুর্যোগ মৌসুমে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সাগরে লঘুচাপের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে।সব মিলিয়ে নৌযাত্রায় বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগের পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।

ঈদে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চল ছেড়ে যায়। তাদের মধ্যে ২০ শতাংশ (৩০ লাখ) যায় নৌপথে। এর প্রায় শতভাগই উপকূলীয় জেলা বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরিয়তপুর ও মাদারীপুরের যাত্রী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হবে ২৭ জুন থেকে।  তবে ঈদের আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ২২ জুন থেকে কার্যত ঘরমুখী জনস্রোত শুরু হবে।  তবে শিক্ষার্থী ও গৃহবধূসহ প্রায় ১৫ শতাংশ (৪ লাখ ৫০ হাজার) মানুষ ঈদযাত্রা শুরুর আগেই ঢাকা ছেড়ে যায়।  ফলে ২২ জুন থেকে ঈদের আগের দিন ২৮ জুন পর্যন্ত সাত দিনে ২৫ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী নৌপথে গন্তব্যে যাবে।  এর মধ্যে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে লঞ্চে যাবে ২২ লাখ ৮৫ হাজার।  এই হিসেবে সদরঘাট থেকে প্রতিদিন ৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৭ যাত্রী গন্তব্যের উদ্দেশে লঞ্চে চড়বে।

নৌযান স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাগজে-কলমে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের নৌপথ ৪১টি।  তবে তীব্র নাব্যসংকট ও যাত্রীস্বল্পতার কারণে বড় আয়তনের ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল না করায় অন্তত ১৫টি নৌপথ দৃশ্যত ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।  বাকি ২৬টি নৌপথে প্রায় ৭০টি লঞ্চ নিয়মিত আসা-যাওয়া করে।  ঈদের আগে লঞ্চের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৮০ হবে।  এর মধ্যে ৯০টি লঞ্চ প্রতিদিন সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে সদরঘাটে আসবে ৯০টি।

নাগরিক সংগঠনটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিদিন ৯০টি লঞ্চে তিন লাখ ২৭ হাজার ৮৫৭ যাত্রী বহন করা হলে একটি লঞ্চে গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৬৪২ জন যাত্রী উঠবে।  কিন্তু কোনো লঞ্চেই দুই হাজারের বেশি যাত্রীধারণক্ষমতা নেই।  অনেক লঞ্চের ধারণক্ষমতা এক হাজারেরও নিচে।

এ ছাড়া ঈদের আগের তিন দিন ঘরমুখী জনস্রোত দেড়গুণ বেড়ে যায়।  যাত্রীচাপ সামাল দিতে অনেক লঞ্চে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ যাত্রী বহন করা হয়ে থাকে।  ফলে ডেকে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি ছাদেও যাত্রী তোলা হবে।

জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে বিড়ম্বনামুক্ত নিরাপদ ঈদযাত্রার স্বার্থে সরকারি উদ্যোগে বিকল্প ব্যবস্থায় নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।  এ ছাড়া টার্মিনালসহ নৌপথে সর্বোচ্চ নজরদারি ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts