৩২ নম্বর অরক্ষিত রেখে
কামাল বারি
হয়তো তারা বিরাট মুখের দিকে তাকাতে পারতো না-
সাহস পেতো না…
এভারেস্টের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের ক্ষুদ্রাদপি ক্ষুদ্র অবয়বে
একা একাই মুষড়ে পড়ে মরে যেতো…
আরও সমূহ ভয় ছিলো তাদের…
এটাকি সম্ভব করা সম্ভব?
হয়তো খুনিরা তাই রাতকেই বেছে নিয়েছিলো…
অন্ধের পাশব ক্ষুধা যেন রাতের আঁধারেই ভালো মেটে!
পিতা, তুমি না হয় বুকভরা ভালোবাসায় অর্জন করেছিলে
রক্তাক্ত মৃত্যুর অধিকার!
কিন্তু, তোমার সংগ্রাম সারথী রেণু-
তোমার প্রাণপ্রতিম রাসেল-
তোমার গর্বের ধন কামাল- জামাল-
কন্যাতুল্য পুত্রবধূদ্বয় সুলতানা- রোজী-
আরও শত স্বজন?
তাদেরকেও হত্যা করলো…!
হায়, রাতকেই বেছে নিয়েছিলো তারা!
ঠিক যেন পাকী হানাদার হায়েনা চরিত্র!
একাত্তরের পঁচিশে মার্চ কালরাতের জন্ম দিয়ে যেভাবে
ঘটিয়েছিলো নৃশংস গণহত্যা!
সেভাবে পিতাকে সবংশে হত্যার দুরভিসন্ধিতে
তারা বেছে নিয়েছিলো পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট কালরাতের অন্ধ আঁধার!
সেই রাতের ঘুমন্ত পাখিরা সব ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞে
সমস্বর কান্নায় জেগে উঠে
হঠাৎ থেমে গিয়েছিলো…!
৩২ নম্বরের সড়ক সে রাতে প্রেতাত্মাচক্রের সশস্ত্র মহড়ায়
কেঁপে কেঁপে উঠেছিলো কি?
এই কি প্রতিদান প্রাপ্য ছিলো স্বাধীনতার স্থপতির?
এই কি প্রতিদান প্রাপ্য ছিলো অপত্য ভালোবাসার?
এই কি প্রতিদান প্রাপ্য ছিলো জাতির পিতার?
স্বাধীন বাংলাদেশ সেদিন কী ভীষণ ঘুমে অচেতন ছিলো-
যে এমন ক্ষতি ঘটে গেল রাতের আঁধারে!
হায়, যদি যুদ্ধজয়ী বাংলাদেশ জেগে থাকতো-
তবে কি পথভ্রষ্টের দল সাহস পেতো?
হায়, যে পিতা স্বাধীন স্বদেশ উপহার দিয়ে
বাঙালির হৃদয়ে স্থায়ী আসনে আসীন-
সেই পিতার একটু নিরাপদ ঘুমের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ?
হায়, দরজায় সশস্ত্র ঘাতক-
পাতকী খুনির দল মেতে উঠেছিলো বীভৎস হত্যাযজ্ঞে!
সে রাতে শহরের শোকাহত তাবৎ বৃক্ষের ক্রন্দনরত
পাতাগুলি ঝরে পড়েছিলো নীরবে-
সমগ্র স্বদেশের শোকাকুল ফুলগুলি তুমুল কান্নায় ঝরে পড়েছিলো
শ্রাবণের কান্নারত বৃষ্টিধারার মতো-
ফুলতলার কান্নাভেজা ঘাসের সাথে
ফুলগুলি গলাগলি ধরে সে-কী শোকের বিলাপ!
সূর্য সেদিন প্রভাত প্রভায় ফুটতে দ্বিধাগ্রস্ত!
বাকরুদ্ধ ভোরের বাতাস…!
হায় বাংলাদেশ! তোমার জন্মের ঠিকানা
৩২ নম্বর অরক্ষিত রেখে
তুমি কী মরণ ঘুম ঘুমিয়েছিলে সেদিন?