বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস ll ফার্মাসিস্টরাই রোগীদের প্রকৃত বন্ধু

রাতবিরেতে অনেক সময়ই চিকিৎসক না মিললে পেট ব্যথা বা মাথা ধরার মতো নানা অসুখের চিকিৎসা হয়ে যায় ধারে কাছে কোনও ওষুধের দোকান খুঁজে পেলে। ওষুধের দোকানে থাকা মানুষটিই তখন ধন্বন্তরির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধটি দিয়ে সাহায্য করেন। সাধারণ ভাবে এই মানুষটিকে আমরা ‘ওষুধ বিক্রেতা’ বলেই জানি। তবে, এই ভূমিকায় থাকা মানুষগুলিকে ফার্মাসিস্টও বলা হয়।

ওষুধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদেরকে ইংরেজি পরিভাষায় ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট বা ড্রাগিস্ট নামে ডাকা হয়।

চিকিৎসকেরা রোগীদের ওষুধ দেওয়ার আগেই, সেই ওষুধগুলিকে নানা রকম যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ল্যাবরেটরিতে ওষুধগুলির ডোজ ও বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই সেই ওষুধ চিকিৎসকেরা রোগীদের দিয়ে থাকেন। এর পরেও ওষুধের নানা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলে এবং শেষমেশ তা বাজারে ছাড়া হয় সকলের ব্যবহারের জন্য। তাই চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক সময়ই ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা কিছুটা আড়ালে থাকলেও, সাধারণ মানুষের জন্য ওষুধ তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কারণ, ফার্মাসিস্টরা ওষুধের নিয়ন্ত্রণের দিকটি নজরে রাখেন চিকিৎসকদের যথোপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের অভাব থাকায় অনেক সময় ফার্মাসিস্টরাই রোগীদের ওষুধ দিয়ে থাকেন।

আজ ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস। ২০১০ সাল থেকে বিশ্বে দিবসটি পালন শুরু হলেও বাংলাদেশে এই দিবস পালন শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ফার্মেসি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ।’

বৈশ্বিকভাবে প্রথম সারির সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী পেশার মধ্যে ফার্মাসিস্ট পেশা একটি। ফার্মাসিস্টরা যেমন একাধারে ওষুধ তৈরি, বিপণন এবং নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন তেমনি ফার্মেসির পেশার সঙ্গে শিক্ষকতা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং একটি ফার্মেসি নিঃসন্দেহে আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশ্বস্ত সঙ্গী।

বাংলাদেশের অধিকাংশ ওষুধ বিক্রি হয় ফার্মাসিস্টের পরামর্শে। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থান থেকে এটাই বাস্তব চিত্র যে, অধিকাংশ রোগীর কাছে ফার্মাসিস্টই তার প্রথম পরামর্শক, চিকিৎসক এবং আরোগ্য সহায়ক। ফার্মেসিতেই অনেক রোগী প্রথম জানতে পারে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রোগ বা ডায়াবেটিস এর কথা, জানতে পারে প্রথম গর্ভধারণের সংবাদ। জীবনের এই প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রোগী প্রথম যাকে কাছে পায় তিনি ফার্মাসিস্ট।

বিষয়টি একজন ফার্মাসিস্টের জন্য যতটা আত্মতুষ্টির ঠিক ততটা নাজুকও বটে। প্রাথমিক পরামর্শক হিসেবে ফার্মাসিস্টের কাঁধে বর্তায় সঠিক তথ্য, সঠিক ওষুধ, সঠিক পরামর্শ প্রদানের দায়িত্ব। একজন ফার্মাসিস্টের ওপর দায়িত্ব বর্তায় রোগীকে ড্রাগ-ড্রাগ ইন্টারেকসন, ড্রাগ-ফুড ইন্টারেক্সান বুঝিয়া দেওয়া, ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে তার তথ্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে প্রতিবেদন হিসেবে পাঠানো, বাড়িতে ওষুধ সংরক্ষণের সঠিক উপায় বিস্তারিত জানানো যা আমাদের দেশে অনেকাংশে অনুপস্থিত।

দেশে প্রতি বছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বের হলেও তাদের ৮০ ভাগই সরাসরি ওষুধ উৎপাদনে কাজ করছেন। হাসপাতাল বা ফার্মেসিতে কাজের সুযোগ না থাকায় প্রতি মাসেই দেশ ছাড়ছেন বিশালসংখ্যক ফার্মাসিস্ট। এত এত ফার্মাসিস্ট বের হওয়ার পরও সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় কাজে না লাগাতে পারার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts