শিরিন সুলতানা কেয়া : দুপুরে বিয়ে হয়েছে। বিকেলে নববধূকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বর। রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মুহূর্তেই বিয়েবাড়ির আনন্দ বিষাদে রূপ নিয়েছে।
মারা যাওয়া বরের নাম মো. শাকিল (২৪)। তার বাবার নাম আবদুস সালাম। শাকিল একজন চাল ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার দুপুরে একই উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের বুলবুল হোসেনের মেয়ে আসমা খাতুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার পরই স্বামীকে হারিয়ে নির্বাক এই নববধূ।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে বরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মরদেহ দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী গোরস্থানে। একটি ঘরে বধূ আসমা খাতুনকে নিয়ে বসে আছেন তার বাড়ি থেকে যাওয়া স্বজনেরা। শাকিলের মা জান্নাতুল মাওয়া শুধু কাঁদছেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন কেউ কেউ।
স্বজনেরা জানান, দুপুরে কনের বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এরপর বিকালে বরপক্ষ কনে নিয়ে আসে। সন্ধ্যার পর বর নিজেই বাড়িতে আলোকসজ্জার বাতিগুলো জ্বালিয়ে দেন। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বারান্দার গ্রিলে হাত দেন শাকিল। এতেই তিনি বিদ্যুতায়িত হয়ে যান। আলোকসজ্জার বৈদ্যুতিক তার লিকেজ হয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ছিলো বাড়ির বারান্দার গ্রিল। শাকিলকে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়তে দেখে তার চাচা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রাতেই তার মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
শাকিলের মা জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। কত শখ করে তার বিয়ে দিনু। আমার ছেলে, ছেলের বউ বাড়িতে থাকবে। কত আনন্দ করব। আমার আর কিছুই থাকলো না। মেয়েটাকে এখন কী করে সান্ত্বনা দিব আমি! এই মেয়েটার এখন কী হবে!’
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘শাকিল ছেলেটা আমাদের চোখের সামনে বড় হলো। খুবই ভাল একটা ছেলে ছিলো সে। বিয়ের দিন তার এভাবে মারা যাওয়াটা মেনে নেওয়ার মতো না। পুরো গ্রামের মানুষ ভীষণভাবে শোকাহত।’