দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করতে আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু টানেল ছাড়াও এ দিন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের আরও ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এছাড়া, তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এক বিশাল মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান জানান, আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মোট ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে টানেলের দুই প্রান্ত বর্ণিল সাজে সেজেছে। পতেঙ্গাসহ টানেলসংলগ্ন বিভিন্ন সড়ক রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। একইভাবে সিটি আউটার রিং রোড থেকে শুরু করে পতেঙ্গা জংশন পর্যন্ত এবং শাহ আমানত সেতু থেকে আনোয়ারার কেইপিজেড পর্যন্ত সড়ক দ্বীপ এবং এপ্রোচ রোডে তোরণ, ব্যানারসহ নানা রঙের ফেস্টুনে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। নেতাকর্মী এবং স্থানীয়রাও রয়েছেন উৎসবের আমেজে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন এবং এ উপলক্ষে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু করে পতেঙ্গা টানেল প্রান্ত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ সাজিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ ছাড়া টানেল উদ্বোধন ঘিরে আলোকায়নে নতুনভাবে সেজেছে পুরো এলাকা। টানেলের দুই প্রান্ত নতুন পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর বাসিন্দারা ভিড় করছেন পতেঙ্গা প্রান্তে।
স্থানীয় মানুষ বলছেন, কর্নফুলী টানেল তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। এমন দিন আসবে কখনো ভাবেননি তারা। এই অভিজ্ঞতা একদমই নতুন এই এলাকার মানুষের কাছে, ফলে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই স্থাপনা। টানেল প্রান্ত থেকে এয়ারপোর্ট সড়ক ধরে এগোলেই চট্টগ্রাম শহরকে অচেনা লাগে। অনেকের মন্তব্য, এ যেন ভিন দেশের উন্নত কোনো শহর!
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এই টানেলের মেগা প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেলটি বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ এটিই এই অঞ্চলের প্রথম নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গপথ।
তিনি বলেন, টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘দুটি শহরকে একটি নগরীতে’ পরিণত করবে এবং এটি দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করবে। শিল্পায়নের অপার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে এবং নগরীর পরিধি প্রসারিত করার মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন এবং টানেল পার হওয়ার পর সকাল ১১টায় আনোয়ারা নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন। যদিও টানেলটি ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহনের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল ছাড়াও আরও ১৯টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
টানেলটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে সড়ক পথের দূরত্ব কমাবে। একইসঙ্গে বন্দরনগরীতে প্রবেশ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোতে যাতায়াত সহজ করবে। এই টানেল চট্টগ্রাম বন্দর ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে। এতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। ফলে কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সেতুর যানজট কমে আসবে। টানেলটি ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক চীনের এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, পুরো রুটের দৈর্ঘ্য ৯.৩৯ কিলোমিটার, সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এর ব্যাস ১০.৮০ মিটার। চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন এই টানেল নির্মাণ করেছে।