মাগুরা জেলায় ২টি আসনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চিন্তামুক্ত। এই আসন দুটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় জয়ের ব্যাপারে নৌকার প্রার্থীরা অনেকটাই ‘নির্ভার’।
যদিও মাগুরা ১ ও ২ আসনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন, কিন্তু মাগুরা-২ আসনে দলটির প্রার্থীর কিছুটা তৎপরতা দেখা গেলেও মাগুরা-১ আসনে কিছু চোখে পড়ছে না বললেই চলে।
লাঙ্গল প্রতীকের বাইরে ডাব, সোনালী আঁশ, একতারা ও টেলিভিশনের মতো প্রতীকেও আট জন প্রার্থী রয়েছেন। এসব প্রতীকের অনেক প্রার্থী থাকলেও তাদের নিজেদের অবস্থান ও দলগুলোর তেমন সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। ফলে মাগুরার দুটি আসনে নৌকা প্রতীকের বিপরীতে একতারা, টেলিভিশন, সেনালী আঁশ, ডাব ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার মতো অবস্থানে নেই। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
মাগুরা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী সাকিব আল হাসান, মাগুরা-২ আসনে ড. শ্রী বীরেন শিকদার। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের প্রচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। সাত দিন চলে গেলেও মাগুরায় আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রচার ছাড়া অন্যদের ব্যানার-পোস্টার, মাইকিং ও গণসংযোগ তেমন চোখে পড়ছে না। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীর প্রচার নেই বললেই চলে।
মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। তবে লাঙ্গল, সোনালী আঁশ, ডাব ও টেলিভিশন প্রতীকের আরও চারজন প্রার্থী রয়েছেন। মাগুরা সদরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার চোখে পড়েনি। কেবল লাঙ্গলের কিছু পোস্টার দেখা গেছে। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ি প্রতীকেরও অল্প কিছু পোস্টার দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এসব প্রতীক বা দল কোনোটাই পরিচিত নয়। তবে পুরো নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে গেছে নৌকার পোস্টারে।
সাকিব আল হাসানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের কাজী রেজাউল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. সিরাজুস সায়েফিন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কে এম মোতাসিম বিল্লা এবং তৃণমূল বিএনপির সনজয় কুমার রায়।
স্থানীয় রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা বলছেন, তাদের কেউই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দল হিসেবে জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য তিনটি দলই সাধারণ ভোটারের কাছে নতুন। তা ছাড়া এসব দল থেকে যারা প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারাও তেমন একটা জনপ্রিয় নন।
সাকিব অবশ্য তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের যোগ্য হিসেবেই বিবেচনা করছেন। মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে চারজন প্রার্থী আছেন। তারা সবাই যোগ্য। ভোটাররা যাকে পছন্দ করবেন, তারই নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে এখানে। আমাদের সবারই চেষ্টা থাকবে, যাতে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারি। একই সঙ্গে চেষ্টা থাকবে, যত বেশি ভোটার আনা যায়। কারণ, নিকট অতীতের নির্বাচনগুলোতে হয়তো ওই রকম ভোটার টার্নআউট হয়নি। এর ফলে এবার এটাই বড় চ্যালেঞ্জ যে আমরা কত ভোটারের আগ্রহ জোগাতে পারি।’
মহম্মদপুর, শালিখা ও মাগুরা সদরের চারটি ইউনিয়ন নিয়ে মাগুরা-২ আসন। এখানে চারবারের এমপি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এখানে নৌকার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। লাঙ্গলের নির্বাচনী প্রচার ছাড়া আর কারো কোনো তৎপরতা নাই।
জানতে চাইলে নামসর্বস্ব দলের দুইজন প্রার্থী ও কয়েকজন নেতা কর্মী বলেন, ‘নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর পোস্টার তো চোখেই পড়ে না। আমরা দল হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী না। প্রার্থীরা নিজেদের মতো কিছু করার চেষ্টা করছেন। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’
দুইটি নির্বাচনী এলাকার বেশ কিছু ভোটারের সাথে কথা হয়। তারা জানান, নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে আগ্রহ কম। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ভোট বর্জনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় আছে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দুটি আসনেই লাঙ্গল আম বা ডাবের প্রার্থী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো প্রার্থী নেই নৌকা প্রতীকের বিপরীতে। মাগুরায় দুটি আসনের ভোটকে অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা বলে মনে করছেন এসব ভোটাররা।
মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, ভোটের সময় যতো এগিয়ে আসবে প্রচার ততো বাড়বে। তারা নৌকার জন্য ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। বাকি প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হলেও রাজনীতিতে তিনি নতুন। তারপরও নৌকার বিজয়ের জন্য সবাই কাজ করে যাচ্ছি।