বরিশালে বিপদে পড়া মানুষদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণ

বরিশালে ঘুরতে বের হয়ে শাস্তি পেলেন এএসআই

খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল: সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে খাবার হোটেল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়া হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছেন হোটেল মালিকরা। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ১০ জন হোটেল মালিক ঐক্যবদ্ধভাবে শনিবার (৩ জুলাই) এই কার্যক্রম শুরু করেন।

রোববারও (৪ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে হাসপাতালের সামনে মূল সড়কের পাশে খাবার বিতরণ করা হয়। এ সময় লাইনে দাড়িয়ে রোগীর স্বজনদের খাবার নিতে দেখা গেছে। হোটেল মদিনার কামরুল হাসান বাবলু বলেন, আমরাতো সারা বছরই ভাত বেচি (বিক্রি), ব্যবসা করি। এখন মানুষ বিপদে পড়েছে, ভাত ফ্রি দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তাই যতদিন পারি ফ্রি দেবো।

তিনি বলেন, লকডাউনে খাবার হোটেল বন্ধ করে দেওয়ায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা বিপদে পড়েন। আমরা লকডাউনের শুরুতে দেখেছি খাবারের জন্য রোগীর স্বজনরা যথারীতি হাহাকার করেছে। তখন হোটেল মালিকরা বসে সিদ্ধান্ত নেই, বিপদে পড়া মানুষদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণের। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার প্রায় দেড় হাজার মানুষকে এবং রোববার এক হাজারের বেশি মানুষকে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার দিয়েছি।

বাবলু বলেন, আমরা চেষ্টা করব সার্মথ্য অনুযায়ী আরও কিছুদিন চালিয়ে নেয়ার। কিন্তু আমাদের টাকা ফুরিয়ে গেলে বিতরণ কর্মসূচিও বন্ধ করে দিতে হবে। খাবার নিতে আসা রোগীর স্বজন সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমার বাবা ১ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু লকডাউনে খাবার হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছি। হোটেল মালিকরা বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করছেন জানতে পেরে খাবার নিতে এসেছি। খাবার পেয়ে ভালো লাগছে। বিনামূল্যে খাবার বিতরণকারী হোটেলগুলো হলো- হাওলাদার, রাঁধুনী, তাওহিদ, ভাই ভাই, গোবিন্দ, মদিনা, নন্দিনী, ভোলা, মিতালী ও জমজম।

এদিকে বাইরে ঘুরতে বের হয়ে শাস্তির মুখে পড়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই কামরুজ্জামান। রোববার (৪ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে নগরীর আমতলা মোড়ে চেকপোস্টে আটকা পড়েন এই পুলিশ সদস্য। এ সময় তার মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকর্মী এন আমিন রাসেল বলেন, আমতলা মোড়ে নিয়মিত চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে হেলমেটবিহীন দুই ব্যক্তি হাজির হন। চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চায়। এ সময় তারা মোটরসাইকেলে তেল তোলার জন্য বেরিয়েছেন বলে জানান। মোটরসাইকেল যিনি চালাচ্ছিলেন তিনি নিজেকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্য দাবি করেন এবং নিজের নাম কামরুজ্জামান পদবি এএসআই হিসেবে জানায়। তবে তার তখন কোনো ডিউটি ছিল না এবং কোনো পরিচয়পত্রও দেখাতে পারেননি। এমনকি তার গাড়ির কাগজপত্রও সঙ্গে ছিল না।

মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ওই ব্যক্তি কাগজপত্র দেখিয়ে নিয়মানুযায়ী মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারবেন। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কাজ মাননীয় পুলিশ কমিশনার তদারকি করছেন।

প্রতিদিন মেট্রো এলাকাজুড়ে চলছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। তাই সবার জন্যই আইন সমান, তাতে আমাদের পুলিশ সদস্য হলেও কিছু করার নেই। আইন আইনের গতিতে চলবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Print Friendly

Related Posts