অখন্ড পৃথিবী চাই

শান্তি ও অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী গড়ার বার্তা নিয়ে কবি এখলাসুর রাহমানের বই

 

শিউল মনজুর []

পৃথিবীর সবমানুষই কমবেশি স্বপ্ন দেখে। অট্টালিকায় যে থাকে সেও, আবার যে কুড়ে ঘরে বাস করে সেও। মানুষ ভেদে আবার স্বপ্নও ভিন্নতর হয়।

তবে অট্টালিকা ও কুড়েঘরে বাস করা দুই ব্যক্তির স্বপ্ন দুরকম হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কর্মও একেক মানুষকে একেক রকম স্বপ্ন দেখায়। যিনি লেখক বা কবি তিনিও স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্নের জাল বুনেন, স্বপ্নের ভেতর দিয়ে তার লেখার জগতটাকে পাঠকের জগতে উপস্থাপন করেন।

পাঠক যখন লেখকের লেখার স্বপ্ন জগতটাকে নিজের স্বপ্ন জগতের সাথে মিলিয়ে নেন এবং তার স্বপ্ন ও চিন্তার জগত যখন লেখকের স্বপ্ন ও চিন্তার জগতের সাথে এক বিন্দুতে মিলিত হয় তখন লেখকের প্রতি পাঠক শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। লেখকের লেখা কিংবা বইয়ের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে সে অপেক্ষা করে।

লক্ষ্য করা গেছে, যখনি সর্বজনীন চাওয়া পাওয়ার বিষয়কে লেখার বিষয়স্তু হিসেবে কোন লেখক কিংবা কবি শব্দে, বাক্যে, বর্ণনায় নান্দনিকতার রঙে উচ্চারণ করেন তখনি সে লেখা পাঠককে নাড়া দেয় এবং পাঠকের মনে দীর্ঘমেয়াদি স্থান করে নেয়।

সম্প্রতি ৫৮টি কবিতার সংকলন, অখন্ড পৃথিবী চাই পড়ে আমার এমনটিই মনে হয়েছে।

কবি এখলাসুর রাহমান এ বইটিতে বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন যে গুলির মধ্যে মানুষের মনের কথা, মানুষের স্বপ্নের কথা বা সাধারণ জনগণ তার অবস্থান থেকে যা চিন্তা করে বা স্বপ্ন দেখে তাই তিনি শব্দে, বাক্যে অথবা পঙক্তির শাখা প্রশাখায় লিপিবদ্ধ করেছেন যা আমার মতো সাধারণ পাঠককে মুগ্ধ করেছে।

এখানে তাঁর তিনটি কবিতার অংশ বিশেষ উল্লেখ করা হলো;

এক.    যেখানে ক্ষধার্ত মানুষ/পায় না খেতে ভাত
অস্ত্রের পেছনে ছোটে/কোটি কোটি হাত।

(কবিতার শিরোনাম; যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, পৃষ্টা-১৬)

দুই.    মানুষ কভূ মরে নাকো/মানুষ দূরে সরে রয়।
দেখি যারে শরীর ছুঁয়ে/সে কি তবে মানুষ নয়?

(কবিতার শিরোনাম; মানুষ কখনো মরে না, পৃষ্টা-৩৫)

তিন.    দেশে দেশে/রাস্তায় রাস্তায় /জনতার মিছিল
হাতে প্ল্যাকার্ড/বুকে পিঠে স্লোগান লেখা
মুখে আকাশ বিদারী উচ্চারণ;
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই/অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চাই!

(কবিতার শিরোনাম; স্লোগান, পৃষ্টা-৫১)

এ সব পঙক্তিমালা নিঃসন্দেহে মাস্ট পিপলের উচ্চারণ বা গণচিন্তা চেতনার অংশ বিশেষ। যে কারণে পাঠকের বোধ ও কবির বোধ একই কেন্দ্রে মিলিত হয়েছে বলেই আমার ধারণা।

আরো কয়েকটি কবিতার শিরোনাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যেমন অখ- পৃথিবী চাই, দেশ আমাকে বলে যদি, শান্তির দূত, জাগো প্রভৃতি কবিতার মধ্যে যে আশা, আকাঙ্খা ও প্রত্যাশার কথা বর্ণিত হয়েছে তা আমাদের সাধারণের অন্তরসম বলেই মনে করি।

প্রকৃতপক্ষে ধর্ম ও বর্ণের পার্থক্য সাধারণ মানুষ করে না। সাধারণ মানুষ শান্তির পতাকা উড়িয়ে সমাজের সবাইকে নিয়ে ডালভাত খেয়ে নিরাপদে থাকতে চায়। সাধারণ মানুষের এমন অনুভূতি নিয়েই এখলাসুর রাহমানের সৃষ্টি অখন্ড পৃথিবী চাই।

বইয়ের কবিতাগুলি এমন বাণীই প্রচার করে। যিনি এমন বাণী পাঠকের নিকট উপস্থাপন করেন, নিঃসন্দেহে তিনি মহৎচিন্তার অধিকারী। তবে তাঁর এমন সৃষ্টিশীল কবিতাগুলি সাদাপাতায় বন্দী হয়ে থাকুন তা তিনি চান না।

তিনি আশা করেন কবিতার ভেতর দিয়ে তিনি যে আহ্বাণ করেছেন, তা যেনো পৌঁছে যায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে দেশে, রাজা-বাদশাদের খাসমহলে, জাতি সংঘের অফিস আদালতে এবং মানুষ যেনো মানবিকতায় উজ্জ্বল হয়ে অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে উদ্ভুদ্ধ হয়। ভবিষ্যত পৃথিবী নিয়ে কবির এমন প্রত্যাশা বা স্বপ্ন আমাদেরকে মুগ্ধ করে। কবির প্রত্যাশা ও স্বপ্নের সাথে আমরাও ঐক্যমত ঘোষনা করি এবং দেশে দেশে বিশ্বজুড়ে প্লেকার্ড নিয়ে দাঁড়াই, অখন্পৃথিবী চাই।

 

শিউল মনজুর  কবি ও কথাসাহিত্যিক।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts