বঙ্কিমের বাড়ি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ২১৮ পঞ্চাননতলা রোড, হাওড়া। বাংলার শেফিল্ডের এই বাড়িতেই এক সময় কাটিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভগ্নপ্রায় বাড়িটিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে বঙ্কিম সংগ্রহশালা বানানোর কথা জোর গলায় ঘোষণা করেছিলেন হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী। কিন্তু তার পর কেটে গিয়েছে বহু দিন। ম্যাজিস্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির অবস্থা যে-কে সেই। উলটে এই ঐতিহ্যবাহী বাড়ির “এক্সট্রা গ্লো” বাড়িয়েছে বট-অশ্বত্থের মোটা মোটা ঝুরি।

 

হাওড়া ময়দান থেকে এক টোটোর দূরত্বে বঙ্কিমের নামাঙ্কিত পার্কের ভিতরেই রয়েছে বাড়িটি। হাওড়া সিটিজেন্স ফোরামের সম্পাদক শ্যামলকুমার কর জানালেন, ১৮৮১ থেকে ১৮৮৬ অবধি হাওড়ার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ওই সময়কালের বেশ অনেকটা সময়েই ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের কেটেছিল এই বাড়িতে। বাড়িটি ভাড়া নিয়েই তিনি তাঁর সরকারি কাজ করতেন। সেইসঙ্গে লেখালেখিও৷ জানা যায়, ওই বাড়িতে বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে বেশ কয়েকবার নাকি গিয়েছিলেন বিশ্বকবি-ও। যদিও তিনি তখনও বিশ্বকবি হননি৷

 

এত অপরিসীম গুরুত্ব যে বাড়ির, তার যে সংরক্ষণ দরকার তা বুঝেছিল “হাওড়া সিটিজেন্স ফোরাম”। তাই বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিধন্য বাড়ি ও সংলগ্ন এলাকার রক্ষণাবেক্ষণের দাবিতে এই ফোরাম লড়াই শুরু করে সেই ১৯৭৪ সালে। চেষ্টার আংশিক সফলতা আসে ২৫ বছর পর, ১৯৯৯ সালে। তৎকালীন হাওড়ার মেয়র স্বদেশ চক্রবর্তী বাড়ি সংলগ্ন অঞ্চলে একটি পার্ক করার সিদ্ধান্ত নেন। পড়ে থাকা কিছুটা জায়গা নিয়ে তৈরি হয় বঙ্কিম পার্ক। কথা হয়েছিল বাড়িটির বিষয়েও, তবে সে বিষয়ে স্রেফ হতাশাই সঙ্গী হয় শ্যামলবাবুদের।

bankim-04

এরপর কেটে যায় দেড় যুগ। রাজ্যের মসনদে ইতোমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। গদি পরিবর্তন হল হাওড়া কর্পোরেশনেও। ২০১৪ সালে মেয়র হলেন বর্তমান শাসক দলের প্রতিনিধি, বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক ডাঃ ভোলানাথ চক্রবর্তীর ছেলে রথীন চক্রবর্তী। বঙ্কিমের বাড়িকে হেরিটেজ করার আবেদন নিয়ে তাঁর দরবারে ফের পৌঁছাল সিটিজেন্স ফোরাম। অবশেষে ২০১৫-র ২২ জুন পার্কের এক বিশাল সভা ডেকে হাওড়ার মেয়র ঘোষণা করলেন, বাড়ি ও পার্কের জৌলুস আরও বাড়ানোর জন্য ৫ কোটি টাকা খরচ করবে হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন। বলা হল, বঙ্কিমচন্দ্রের চরণধূলিপ্রাপ্ত বাড়িতে তৈরি হবে তাঁর নামে সংগ্রহশালাও।

 

২০১৬ শেষ । হিসেবমতো সেই মিটিংয়ের পর কেটে গিয়েছে আরও দেড় বছর। কলকাতা ২৪x৭-দেখল, এখনও নোনা-শ্যাওলা ধরা লাল ইট বের করেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সাহিত্যসম্রাটের স্মৃতিধন্য বাড়িটি। জানলার কাঠের ফ্রেম বহুদিনই ভেঙে গিয়েছে। বেদখল হয়েছে কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকা লাগোয়া মাঠটিও। সেইখানে মাথা তুলেছে কাঠের আসবাবপত্র সারাইয়ের দোকান, বাঁশ রাখার ঘেরাটোপ এবং এমনকী গাড়ি রাখার একটি গ্যারেজও। বাড়িটিও ক্রমে বেদখলও হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির বর্তমান বসবাসকারী মুখোপাধ্যায় পরিবার। তাদের দাবি, কর্পোরেশন যদি তাদের জন্য বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করে এখানে বঙ্কিমচন্দ্রের নামে সংগ্রহশালা গড়ে তাহলে কোনও আপত্তি নেই। নচেৎ বাড়ির ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই।

 

এত যে ঘোষণা সেই সংগ্রহশালার কী হল? প্রশ্ন করেছিলাম হাওড়া শহরের মেয়র রথীনবাবুকে। মেয়রের আশ্বাস, সংগ্রহশালা হবে। তবে আইনের গেরোয় কাজের গতি আটকে গিয়েছে। সেইসব জটিলতা কাটলেই তৈরি হয়ে যাবে বঙ্কিম সংগ্রহশালা। তবে আইনি মারপ্যাঁচ কবে মিটবে তা বলতে তিনি অপারগ। অতএব বাড়িটির আপাতত যে ওই দৈন্যদশাই থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেখলে ভয় হয়, হযবরল-র হিজবিজবিজ কথিত কিংকর্তব্যবিমূঢ় নামের বাড়িটির মতো কবে না বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবাহী এই বাড়িও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে৷

 

ছবি ও লেখা : সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় 

Print Friendly

Related Posts