একুশে পদক-এ ভূষিত ফরিদা হোসেনের জন্মদিন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক আজ ১৯ জানুয়ারি, একুশে পদক-এ ভূষিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন পিইএন (পেন)-এর বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ফরিদা হোসেনের জন্মদিন।

তিনি চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার শাহেরখালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেয়ে। তার বাবা ফয়েজ আহমেদ ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রমিক নেতা ও আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক সংস্থার (আইএলও) এর গর্ভনিং বডির সাবেক পরিচালক এবং মা বেগম ফয়েজুন্নেছা একজন গৃহিণী। ফরিদা হোসেন তাদের প্রথম কন্যা। ফেনী জেলার রাজনীতিবীদ মরহুম মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সুযোগ্য স্ত্রী।

সাহিত্যের সকল শাখায় সরব বিচরণ করলেও মূলত তিনি একজন সফল অগ্রজ কথাশিল্পী, জীবনবোধের রূপকার। তার গল্পগুলোর বিষয়বস্তু জীবন থেকে নেয়া। সাদা-মাটা কাহিনীর ভেতর দিয়ে জীবনের গভীরতম সত্যকে উদঘাটন করার ক্ষমতা তার রয়েছে। গল্পচ্ছলে নর-নারীর অন্তর্জগতের বিশেষ করে তাদের রহস্যময় প্রেমানুভূতির প্রকাশ তার অনেক কাহিনীকে করেছে মর্মস্পর্শী। ফরিদা হোসেন যদিও লিখেছেন কম তবু তিনি বাংলা ভাষার একজন সার্থক গল্পকার।

৬০ এর দশকে ছাত্রী অবস্থায় তার প্রথম গল্প গ্রন্থ ‘অজন্তা’ প্রকাশ করে পাইওনিয়ার পাবলিকেশন। প্রচ্ছদ করেন বিখ্যাত শিল্পী ও টিভি ব্যক্তিত্ব মোস্তাফা মনোয়ার। এরপর থেকে তিনি পুরোদমে লেখালেখিতে মনোযোগী হন। তার লেখালেখির সূচনা লগ্নে তারুণ্যের উদ্দীপনায় যখন সমাজ পরিবর্তনের হাওয়া, ষাট দশকের বিদ্যমান সংকট, সমাজ জীবনের দুর্বিসহ চলমান দু:সময়ে ফরিদা হোসেন অসামান্য সাহসী চেতনায় তার লেখনিতে সমাজ ও পরিবেশ জীবনের অস্তিত্ব নির্মাণের মানুষের প্রতিদিনের বাস্তবতার ও আকাঙ্খার মধ্য দিয়ে সত্য অনুসন্ধানের সমাজচিত্র আঁকতে চেষ্টা করেছেন।

ফরিদা হোসেন সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৪ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন। তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন পিইএন (পেন)-এর বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি ও ‘অবিনশ্বর’ সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

১৯৬৫ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হয় ফরিদা হোসেন রচিত ও পরিচালিত প্রথম শিশুতোষ নাটক। ফরিদা হোসেন ১৯৬৬ এর অক্টোবরে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেন। তিনি সহিত্য চর্চার পাশাপাশি আবৃত্তি, সংবাদ পাঠ, শিশু ও মহিলা বিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন।

তার গল্প সংকলন, উপন্যাস, নাটক, শিশু সাহিত্য, অনুবাদগ্রন্থ সহ সব মিলিয়ে প্রায় ৫০টির মতো গ্রন্থ সংখ্যা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, উপন্যাস- শ্রেষ্ঠ গল্প সম্ভার, আরাধনা, সহযাত্রী, একজন কাজলীর কথা, একটি শীতল মৃত্যু, অজন্তা,ঘুম, শাড়ি, হিমালয়ের দেশে, নির্বাচিত গল্প, ক’জনার কথা, স্মৃতি কণিকা, জীবন যেমন, মুখোশ, ইংরেজি গল্প- Short Stories from Bangladesh, Blessing, Selected Short Stories, Devotion, শিশু সাহিত্যের মধ্যে- তেলেদা’র তেলাতঙ্ক, লুকোচুরি, মিতালী, আনন্দ ফুলঝুরি, সুরে ছন্দে ছড়াগান, রোজ রোজ, রূপকথার দেশে, শিশু সাহিত্য সমগ্র, নাটক- মায়া দ্বীপে অভিযান, খুকুর স্বপ্ন, চাঁদ কন্যার কথা, সপ্তবর্ণা, ঝড়ের পরে, অচীনপুরের রূপকথা, তুষার কন্যা, তারার খোঁজে, আনন্দ ভ্রমণ।

ফরিদা হোসেন ১৯৯৭ সালে স্কটল্যান্ড এবং ২০০৩ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা (পিইএন) এর সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। মেক্সিকোতে ফরিদা হোসেনের রচিত ও পরিচালিত শিশুতোষ শর্টফিল্ম ফ্রেন্ডশীপ বিশেষ সুনাম অর্জন করে।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার জিয়ানজিওতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল পেন কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের লেখকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। ফরিদা হোসেন আঞ্জুম প্রকাশনী, আঞ্জুম টেলি নেটওয়ার্ক ও অবিনশ্বর সাহিত্য পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী।

বর্তমানে ফরিদা হোসেন আলোকিত শিশু গড়ার লক্ষ্যে, নিজস্ব রচনা ও পরিচালনায় নির্মাণ করছেন শিশুতোষ ধারাবাহিক রূপকথার দেশে। যার ২৪টি পর্ব ইতোমধ্যে বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি ব্যস্ত রয়েছেন সাহিত্য ও শিশুতোষ অনুষ্ঠান নির্মাণে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts