বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রবিউল ইসলাম আর মামুন হোসেন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান রবিউল। পুরো ৫৬ দিন চলে যায়, রবিউলের কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ বা পরিবার। বন্ধুর খোঁজ পেতে মামুন পুলিশকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতাও করেন। অবশেষে আজ শুক্রবার সেই মামুনের ঘরের মেঝের মাটি খুঁড়েই মিলল রবিউলের কঙ্কাল। বন্ধু রবিউলকে শ্বাস রোধে হত্যা করে নিজের ঘরেই কবর দেন মামুন! ৫৬ দিন ধরে ওই ঘরেই ঘুমিয়েছেন তিনি!
পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। রবিউল ও মামুন উভয়েই সুজানগর উপজেলার সেলিম রেজা হাবিব ডিগ্রি কলেজের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার মামুনকে আটক করেছে। মামুন নিজেই ওই ঘটনার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার মামুনের ঘরের মেঝে খোঁড়া হয়। মামুন জানিয়েছেন, কবর দেওয়ার আগে নিজেই রবিউলের জানাজা পড়েছেন।
গত ৫৬ দিন ধরে মামুন বিভিন্ন মোবাইল নম্বর দিয়ে রবিউলের জন্য ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করেন পরিবারের কাছে। নিহত রবিউল ওই ইউনিয়নের উলাট গ্রামের বাসিন্দা।
পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর জানান, মামুন ও রবিউল দুজনই একটি মেয়েকে পছন্দ করতেন। তবে মেয়েটি পছন্দ করতেন রবিউলকে। এরই ফলে রবিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মামুন। আটকের পর মামুন পুলিশকে এসব তথ্য জানান।
মামুন জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর কৌশলে রবিউলকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন মামুন। পরে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করেন। এরপরই শ্বাস রোধে হত্যা করেন। পরে ঘরের মাটি খুঁড়ে দাফন করে। এর আগে নিজেই জানাজা পড়ে নেন।
পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপহরণ মামলা নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তে আমরা বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছি। মূল আসামিকে ধরতে পারিনি। গত রাতেই আমরা মূল আসামির সন্ধান পাই।’
জিহাদুল কবীর বলেন, ‘তাঁর (মামুন) ঘরে নিয়ে গিয়ে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। তিনি তাঁর ঘরেই কবর দেন। এর আগে জানাজাও পড়েন। তিনি আবার আগের মতো সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলেন। যেন তাঁর বাবা-মা বুঝতে না পারেন এরকম ঘটনা ঘটেছে। আসামি দীর্ঘ ৫৬ দিন ওই ঘরেই ঘুমিয়েছেন।’
পুলিশ সুপার জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মোবাইল ফোনের ‘কলের’ সূত্র ধরে মামুনকে সন্দেহ করা হয়। পরে নজরদারি করে বৃহস্পতিবার মামুনকে আটক করে পুলিশ। মামুনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তাঁর ঘরের মেঝের মাটি খুঁড়ে রবিউলের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল জানান, এদিকে রবিউলের নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পর মামুন রবিউলের বাবা রাজ্জাক শেখের কাছে ভিন্ন ভিন্ন ফোন থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। দীর্ঘদিন রবিউলের খোঁজ না পেয়ে তাঁর পরিবার হতাশ হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে রবিউলের বাবা রাজ্জাক শেখ বাদী হয়ে মামুনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।