শাহ মতিন টিপু : বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। না বিভূতিভূষণ উত্তর চব্বিশ পরগনার নয়, বিহারের দ্বারভাঙার। উত্তর চব্বিশ পরগনার বিভূতিভূষণ ছিলেন গঙ্গোপাধ্যায়, আর ইনি মুখোপাধ্যায়। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ও বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার। রসরচনায়ও রয়েছে অসামান্য দক্ষতা। তিনি অনেক কৌতুক ও রঙ্গরসের গল্পও লিখেছেন। তার খুব জনপ্রিয় বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘বরযাত্রী’ ও ‘নীলাঙ্গুরীয়’।
বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের `বরযাত্রী` যারাই পড়েছেন, ছয় বন্ধু গণশা ঘোঁতনা ত্রিলোচন গোরাচাঁদ রাজেন আর কে গুপ্তকে মনে রাখবেন অনেকদিন। কৌতুক রসের এরকম বই বাংলা সাহিত্যে বেশি নেই। কৌতুক রসের তার আরেকটি বিখ্যাত সৃষ্টি `রানু` সিরিজের গল্পগুলি। কিন্তু বিভূতিভূষণের প্রতিভা ছিল বহুমুখী। ছোটদের জন্যও তিনি লিখেছেন, `পোনুর চিঠি` ও অন্যান্য নানান গল্প – যা বুড়োরাও পরম উৎসাহে পড়েছে। ‘ক্বচিত প্রৌঢ়’ ছদ্মনামেও লিখতেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়।
এ ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে- ‘সর্গাদপী গরীয়সী’, ‘দুয়ার হতে অদূরে’, ‘ কুশীপ্রাঙ্গনের চিঠি’, ‘একই পথের দুই প্রান্তে’, ‘অযাত্রার জয়যাত্রা’, ‘কৈলাশের পাঠরানী’, ‘ দুষ্টু লক্ষিদের গল্প’, ‘জীবন তীর্থ’ (আত্মজীবনী), ‘ কাঞ্চনমূল্য’ (শরৎস্মৃতি পুরস্কার পান), ‘এবার প্রিয়ংবদা’ ইত্যাদি।
বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যয়ের ১২১ তম জন্মদিন আজ। ১৮৯৪ সালের ২৪ অক্টোবর বিহারের দ্বারভাঙায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বিপিন বিহারী মুখোপাধ্যায় । তার আদি নিবাস হুগলী জেলার চাতরা হলেও তার তিন পুরুষের বাস বিহারের দ্বারভাঙ্গায় ছিল। তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেন।
বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কর্মক্ষেত্র ছিল বৈচিত্রময়। কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি ইন্ডিয়ান নেশন পত্রিকার কার্যাধ্যক্ষের পদে আসীন ছিলেন। পরে বিহারের দ্বারভাঙ্গায় মহারাজের সচিব হিসাবেও কাজ করেন। আবার পরবর্তি কালে কিছুকাল শিক্ষকতাও করেন। শিক্ষকতা চলাকালীন তিনি নিজেকে লেখার কাজে নিয়োজিত করেন।
তিরিশোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যে যারা বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে বিশেষভাবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ উল্লেখযোগ্য। এরা রবীন্দ্রনাথের ভাববাদ ও আদর্শবাদকে অস্বীকার করে এক নতুন ভঙ্গিতে সাহিত্য রচনা করেন। Romanticism এর অবয়ব থেকে বের হয়ে Realism কে সাহিত্যের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন।
সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৩৬৪ সালে সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎস্মৃতি পুরস্কার, ১৯৭২ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে ডি এল রায় রীডারশিপ` বক্তা পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে জগত্তারিনী পদক, ১৯৮৬ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট উপাধি এবং ১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতীর `দেশিকোত্তম` পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বহু পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৭ সালেল ৩০ জুলাই বিহারের দ্বারভাঙ্গায় মৃত্যুবরণ করেন সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর।