বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে বছর ঘুরে আবার আসছে পবিত্র মাহে রমজান। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে উত্তর আমেরিকায় পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ার কথা। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারাবির নামাজ আদায় করা হবে। তবে মসজিদে ইফতারির আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। কোনো কোনো মসজিদে ইফতারের আয়োজনই থাকছে না।
রমজান ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র একটি মাস। এই মাসে সিয়াম সাধনার পর উদযাপিত হবে মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। রোজাকে আরবি ভাষায় সিয়াম বা সাওম, আর ফার্সিতে রোজা বলা হয়। সাওম অর্থ বিরত থাকা। আর শরীয়তের পরিভাষায় ফরজ রোজা রাখার নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জিহ্বা অর্থাৎ কোনো কিছু পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা।
মহান আল্লাহ্পাক রাব্বুল আলামীন মুমিন বান্দাদিগকে তাঁর কাছে টেনে নেয়ার জন্য এই পবিত্র মাসের রোজাকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। প্রথম দশ দিন রহমতের, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশ দিন দোজখ থেকে মুক্তির। আল্লাহ্ পাকের নির্দেশে আকাশের মেঘমালা বছরের প্রথমে যে বারিধারা বর্ষণ করে থাকে, তাতে মৃত জমিন যেমন সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা হয়ে পৃথিবীকে নবশক্তিতে বলিয়ান করে থাকে; অনুরূপভাবে মাহে রমজানের রোজা মুমিন বান্দাদের আত্মাকে নবশক্তিতে বলিয়ান করে। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ নামাজ যেমন মুমিনদের শিক্ষা দেয় শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তী হওয়ার তেমনি মাহে রমজানের রোজা শিক্ষা দেয়, তাক্ওয়া, সহিষ্ণুতা ও সংযম। এক মাস সংযম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহে নিয়ে আসে এক অনাবিল আনন্দ আর সুখের বার্তা।
এদিকে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে উত্তর আমেরিকায় পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের কোথাও যদি চাঁদ দেখার বিশ্বস্ত খবর পাওয়া যায় তাহলে আগামী ১২ এপ্রিল রাতে তারাবির নামাজ শুরু হবে। যদিও প্রবাসে লোকাল মুন সাইটিং এবং ইন্টারন্যাশনাল মুন সাইটিং নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রবাসে সাধারণত বিভক্তিতে রমজান শুরু হয় এবং পবিত্র ঈদ উদ্যাপন করা হয়।
নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন মসজিদের ইমামরা জানিয়েছেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার প্রথম রোজা শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বলেন, যেখানেই চাঁদ ওঠার বিশ্বস্ত খবর পাওয়া যাবে, ঐ দিন থেকেই রোজা শুরু হবে। রমজান বা ঈদ নিয়ে বিভক্তির কোনো অবকাশ নেই। এদিকে রোজাদারদের আকৃষ্ট করতে ভিন দেশী ব্যবসায়ীরাও রমজানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
নিউইয়র্কের অধিকাংশ মসজিদে খতম তারাবির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, অ্যাস্টোরিয়া, ব্রুকলিন, ওজনপার্ক ও ব্রঙ্কসের মসজিদগুলোতে খতম তারাবির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অ্যাস্টোরিয়ার আল আমিন মসজিদ, জ্যামাইকার জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার, জ্যামাইকার দারুস সালাম মসজিদ, ব্রুকলিনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, জ্যাকসন হাইটসের জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার, ইস্ট এলমহার্স্ট মসজিদ, ওজনপার্কের আল আমান মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে খতম তারাবির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় সকল মসজিদেই একাধিক ইমাম রাখা হয়েছে। কোনো কোনো মসজিদে সুরা তারাবির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনজুর আহমদ চৌধুরী জানান, চাঁদ দেখা গেলে ১৩ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হবে। সে হিসাবে ১২ এপ্রিল তারাবির প্রস্তুতি নিচ্ছে জেএমসি। তিনি জানান, বর্তমান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জেএমসিতে ২০ রাকাত করে খতম তারাবি হবে। তবে এ বছর মসজিদে কোনো ইফতারির ব্যবস্থা থাকছে না। কারণ ইফতার করতে গেলে মুখের মাস্ক খুলতে হবে। যা এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
মনজুর আহমদ চৌধুরী জানান, মাগরিবের আজান প্রচারিত হওয়ার ১৫ মিনিট পর মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সকল মুসল্লিকে বাসা থেকে ওজু করে জায়নামাজ সঙ্গে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
অ্যাস্টোরিয়ার আল-আমিন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, আল-আমিন মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হবে। এজন্য দুজন হাফেজ থাকবেন। তবে মসজিদে ইফতারি সীমিত করা হয়েছে। ইফতারিতে কোনো ভারী খাবার থাকবে না। শুধুমাত্র খেজুর ও পানির ব্যবস্থা থাকবে।
এদিকে রোজাকে সামনে রেখে নিউইয়র্কের রেস্টুরেন্টগুলো ইফতার বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছে। সীমিত ইনডোর সুবিধা চালু রেখে রেস্টুরেন্টে বসে ইফতার করা যাবে। তবে অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট টু-গো ইফতার বিক্রিতে জোর দিচ্ছেন।
অধিকাংশ রেস্টুরেন্টের মালিকরা জানিয়েছেন, আমরা সাধারণত রমজানে ব্যবসা করতে চাই না। রোজাদারদের সেবা করতে চাই। যে কারণে অন্যান্য বছরের মতো এবারো ইফতারি বক্স বিক্রির ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। এসব ইফতারি বক্সে ১২ থেকে ১৬টি আইটেম থাকবে। ইফতার বক্সের দাম রাখা হয়েছে ৬.৯৯ ডলার থেকে ৭.৯৯ ডলার। নিয়মিত ইফতারির আইটেম ছাড়াও রমজানে স্পেশাল হালিম, বিভিন্ন ধরনের জিলাপিসহ মুখরোচক খাবার তৈরি করা হবে। এ ছাড়াও রোজাদাররা ইচ্ছা করলে নিজেদের পছন্দমতো আইটেম নিয়ে বক্স করতে পারেন।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন গ্রোসারিগুলোতে রমজানের পণ্য সাজানো হয়েছে। নিউইয়র্কের বিভিন্ন গ্রোসারিতে রোজা উপলক্ষে বিশেষ সেল দেয়া হয়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি বলে জানিয়েছেন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও খামার বাড়ি গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার কামরুজ্জামান কামরুল।
প্রবাসের বিভিন্ন সামাজিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ইফতার পার্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তা হবে সীমিত পরিসরে।
সূত্র:ঠিকানা