আব্দুর রহিম দুলাল, চিলমারী (কড়িগ্রাম) ।। অনুমোদিত কোনো বালুমহল নেই, নেই জেলা প্রশাসনের অনুমতিও। অথচ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাসের পর মাস কুড়িগ্রামের চিলমারী ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তি এলাকায় একাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে।
এতে অনেকে বনে গেছে কোটিপতি। অপরদিকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কেউ হচ্ছে ভূমিহীন। কয়েকটি সংঘবদ্ধ দল অবৈধভাবে অবাধে প্রশাসনের নাকের ডগায় বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। ফলে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় হুমকির মুখে পড়েছে শতকোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর রক্ষা প্রকল্প ও নদী তীরবর্তী জনপদ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী নদীর তীর থেকে ২ হাজার ৫’শ ফুট মাঝ থেকে বালু উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও এসব নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছে না বালু ব্যবসায়ীরা। নদীর তীরবর্তি এলাকায় যত্রতত্রভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালূ উত্তোলন করছেন তারা। ফলে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করাসহ হুমকির মুখে পড়েছে শতকোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্প।
এ ঘটনায় নদী তীরবর্তি ব্যাঙমারা, উত্তর রমনা, গুড়াতিপাড়া ও ব্যাপারী পাড়া এলাকার শতাধিক মানুষ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারীরা বলেন, এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভাঙন কবলিত মানুষজন অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। বর্তমানে নদে নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভাঙন কবলিত এলাকা চরে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এসব এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বালু ব্যবসায়ীরা ৮ থেকে ১০ টি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের মহাউৎসবে মেতে উঠেছেন।
জোনাব আলী, চাঁন মিয়া, হায়দার আলীসহ অনেকে জানান, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা গেলে আমরা আমাদের জমিগুলি ফিরে পেতাম এবং আমাদের আবাসন কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হত। কিন্তু যেভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে তাতে ব্যাঙমারা, উত্তর রমনা, গুড়াতিপাড়া ও ব্যাপারী পাড়াসহ রমনাঘাট সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে।
তারা আরো জানায়, বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এসব এলাকার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ৮ থেকে ১০টি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাত-দিন বালু উত্তোলন করা হয়। প্রতিটি ড্রেজার মেশিনে ১২ থেকে ১৫ জন প্রভাবশালীর অংশদারিত্ব রয়েছে। এসব ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলনকৃত বালু পরিবহন মালিকরা ছোট ট্রলি প্রতি ২০০ টাকা এবং বড় ট্রলি ৭০০ টাকা হিসাবে নেন।
জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের কাজেও সংঘবদ্ধ বালু ব্যবসায়ীরা বালু সরবরাহ করছেন। এতে করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহাফুজুর রহমান বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।