বরিশালে আ. লীগের মনোনয়ন পেতে চাচা-ভাতিজা লড়াই

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীর মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ নেতারা এখন রাজধানীতে অবস্থান করছেন। চাচা না ভাতিজা, কে পাচ্ছেন দল থেকে মনোনয়ন এ নিয়ে সংশয় কাটছে না তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। যদিও আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ দুই ভাবে বিভক্তি হয়ে উভয়কেই সমর্থন করে যাচ্ছেন প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে।

গত ৩ এপ্রিল বরিশালসহ দেশের ৫টি সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোট আগামী ১২ জুন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৬ মে। ১৮ মে বাছাই এবং ২৫ মে পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়।

তফসিল ঘোষণার পর সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও নির্বাচনী আমেজ নেই বরিশাল সিটিতে। এ অন্যতম কারণ হিসেবে নগরবাসী বলছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বরিশালের নেতৃবৃন্দ এখনো রাজধানীতে অবস্থান করছেন। এ কারণে এখানে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করবে ১২ কিংবা ১৩ এপ্রিলের পর।

এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথম দিনে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র চাচা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর পরের দিনই ১০ এপ্রিল মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ‘র ভারতের আজমীর শরীফে থাকায় তার পক্ষে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে তার পক্ষে রয়েছে বরিশালের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বড় অংশ। কিন্তু প্রকাশ্যে রাজনৈতিতে মাঠে না থেকেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছেলে পরিচয়ে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। তবে তার সমর্থনেও রয়েছে বরিশালের স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী।

দলীয় মনোনয়ন পেতে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে দৌড়ঝাপ করছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বরিশাল মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। আমার প্রত্যাশার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অবগত আছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, একজন মেয়র এবং সংগঠক হিসেবে সাদিক আবদুল্লাহ শতভাগ সফল। তাকে ফের দলীয় মনোনয়ন দিতে মহানগর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে রেজুলেশন পাঠাবে। দলের সভাপতি মহানগর আওয়ামী লীগের উপর আস্থা রাখবেন বলে তারা আশা করেন। সংগঠন শক্তিশালী রাখতে সাদিক আবদুল্লাহ’র কোনো বিকল্প নেই বলেও দাবি করেন একেএম জাহাঙ্গীর।

এ পরিস্থিতিতে একই পরিবারের চাচা না ভাতিজা কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পূর্বে থেকেই এমন সংশয় সৃস্টি হবে ভেবেই গত ৯ এপ্রিল রোববার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী মহানগর যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন ও মহানগর ছাত্রলীগের অপসারিত সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন। তাদের দাবী চাচা-ভাতিজা দ্বন্দ্বে দুইজনকে বাদ দিলে তাদের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন পেতে সুবিধা হবে।

উল্লেখ্য, ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে চলতি বছরে পূর্বের চেয়ে ৩২ হাজার ৮২৯ জন ভোটার বেড়েছে। গত সিটি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এবার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন। এ বছর বরিশাল সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন। বরিশাল সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র ছিলো ১২৩টি।

 

Print Friendly

Related Posts