সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচার চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অপপ্রচার ঠেকানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
সোমবার (২৮ আগস্ট) মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এমন নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মানুষ যাতে জেনে-শুনে-বুঝে সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণ করে এবং কোনো ধরনের প্ররোচনা বা অপপ্রচারে প্রভাবিত না হয়, সেদিকে সবাইকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমাদের বলা হয়েছে, এরইমধ্যে ১০ হাজারের বেশি নিবন্ধন হয়ে গেছে। লাখেরও বেশি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
কিন্তু ঐতিহাসিক এই উদ্যোগটির বিপক্ষে অনেকেই মিথ্যা ও নেতিবাচক অপপ্রচার করছে। বিপরীতে প্রকৃত তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার কী করতে চাচ্ছেন, মানুষ কীভাবে উপকৃত হবে, তা তুলে ধরতে বলেছেন।
কীভাবে এই অপপ্রচার রোধ করা হবে- জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের যারা যেখানে যাবেন, সেখানে কথা বলবেন, সবাইকে জানাবেন। কেউ প্রশ্ন করলে যথাযথ উত্তর দেবেন। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকেও প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
যারা অপপ্রচার চালাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তো আলাদা নির্দেশ দেয়ার দরকার নেই।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে এ সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। ১৩ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ১৭ আগস্ট এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য এতে চারটি স্কিম থাকছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম এবং স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন।
এছাড়া চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার আগেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
তবে কর্মসূচির আওতায় থাকছেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। এর বাইরে ১৮ বছরের বেশি বয়সি যে কেউ চাঁদা দিয়ে এ পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবেন।
পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে প্রথমেই পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে উদ্বোধন করা হয়েছে ‘ইউপেনশন’ নামক ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে।