রসায়নে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন বিজ্ঞানী
এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন মুঙ্গি বাওয়েন্দি (ফ্রান্স), লুইস ই ব্রুস (যুক্তরাষ্ট্র) এবং অ্যালেক্সি একিমোভ (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন)।
কোয়ান্টাম ডট টেকনোলজি আবিষ্কার এবং এটির মাধ্যমে ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব আনার স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের এই পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।
কোয়ান্টম ডট প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিভির কিউলেড স্ক্রিন, অপরাশেনের সময় সার্জনদের গাইড করতে, ক্যান্সারের ওষুধের আরও ভাল লক্ষ্য নির্ধারণে এবং সৌর প্যানেলগুলোতে মেডিকেল ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে আরও উন্নত সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে। এমনকি টিভির পর্দায় আরও রঙিন ছবি দেখা যাবে কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তির মাধ্যমে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে সুইডেনের রয়্যাল একাডেমি অব সায়েন্সেস থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দুর্ঘটনাক্রমে তাদের নাম ফাঁস হয়ে যায়। একাডেমির চেয়ার বলেন, নামগুলো কেন আগে প্রকাশ হয়েছে সেটি বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা অবশ্যই খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যা ঘটেছে তার জন্য আমরা গভীরভাবে অনুতপ্ত।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ঠিক আগে একাডেমির বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত বিজয়ীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
কোয়ান্টাম বিন্দুগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র- এক মিলিমিটারের মাত্র কয়েক মিলিয়ন ভাগ। ডটগুলো তাদের নির্দিষ্ট আকার অনুযায়ী নির্গত আলোর রঙ নির্ধারণ করে যখন তাদের এনার্জি দেওয়া হয়। ছোট কোয়ান্টাম ডটগুলো নীল এবং বড় ডটগুলো হলুদ এবং লাল রংয়ের।
পুরস্কার ঘোষণা করার সময় একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে এত ছোট কণা তৈরির কথা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু এবারের বিজয়ীরা তা করে দেখিয়েছে।
তিনজন বিজ্ঞানিই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। রাশিয়ান পদার্থবিদ আলেক্সি আই. একিমভকে ১৯৮০-এর দশকে প্রথম কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার করার কৃতিত্ব দেওয়া হয় এবং মার্কিন রসায়নবিদ লুই ই ব্রুস তখন বুঝতে পেরেছিলেন যে ক্রিস্টালগুলো তরলে ভাসতে পারে।
প্যারিসে জন্মগ্রহণকারী মৌঙ্গি জি. বাওয়েন্দি কণাগুলোকে আরও বেশি নিয়ন্ত্রিত উপায়ে তৈরি করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। যার মানে দাঁড়ায়, কণাগুলো আরও সহজে তৈরি করা যেতে পারে।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস বলেছে, ‘কোয়ান্টাম ডটস এইভাবে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা নিয়ে আসছে। গবেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ফ্লেক্সিবল ইলেকট্রনিক্স, ক্ষুদ্র সেন্সর, পাতলা সৌর কোষ এবং এনক্রিপ্ট করা কোয়ান্টাম যোগাযোগে অবদান রাখতে পারে। তাই আমরা এই ক্ষুদ্র কণাগুলোর কার্যকারীতা নিয়ে আরও গবেষণা শুরু করেছি।’
তারা তিনজন ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা পুরস্কারের অর্থ ভাগ করে নেবেন।
বুধবার (৪ অক্টোবর) সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে তিন রসায়নবিদের নাম ঘোষণা করে।
নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লুই ব্রুসের জন্ম ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে।
অপরজন আলেক্সি একিমোভ। তিনি ১৯৪৫ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন এবং বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজি ইনকরপোরেশনে কর্মরত।
২০২২ সালে রসায়নে নোবেল পান যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ক্যারোলিন আর বারতোজ্জি, ডেনমার্কের বিজ্ঞানী মর্টেন মেলডাল ও মার্কিন বিজ্ঞানী কে ব্যারি শার্পলেস। ক্লিক কেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োঅর্থগোনাল কেমিস্ট্রির উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় গত বছর তারা নোবেল পান।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার পদার্থবিদ্যায় চলতি বছরের নোবেল পান যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি ও ফ্রান্সের তিন বিজ্ঞানী। পদার্থের ইলেকট্রন ডাইনামিকস গবেষণায় আলোর অ্যাটোসেকেন্ড স্পন্দন তৈরির পরীক্ষণলব্ধ প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করায় পিয়ের আগোস্তিনি (যুক্তরাষ্ট্র), ফেরেন্স ক্রাউজ (হাঙ্গেরি) ও অ্যান লিয়েরকে (ফ্রান্স) এই নোবেল দেওয়া হয়।
২ অক্টোবর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েইজম্যান। নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের আবিষ্কারের জন্য এ বছর তারা নোবেল পুরস্কার পান, যেটি কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছে।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রদান করে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে পুরস্কার বিজয়ীরা একটি পদক এবং ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন পান। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।