কবি আসাদ চৌধুরী আর নেই

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরী কানাডায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কবির ছেলে জারিফ চৌধুরী।

জারিফ চৌধুরী টরেন্টো থেকে হোয়াটসঅ্যাপে বলেন, টরেন্টোর আসোয়া লেকরিচ হাসপাতালে আব্বার মৃত্যু হয়। স্থানীয় সময় বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় তিনি মারা যান।

কবি আসাদ চৌধুরীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তারা সবাই এখন অটোয়ায় আছেন বলে জানান জারিফ চৌধুরী।

আসাদ চৌধুরী আনন্দলোকের কবি। যাপিত-জীবনের নানান প্রসঙ্গ, জটিলতা, সংকট ও প্রতিক‚লতাকে তিনি অনুভব করেছেন আনন্দের মোড়কে। নিজস্ব-বিবরে সৃষ্টি করছেন আপন-আনন্দধারা।

আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী এবং মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সাহানা বেগম।

আসাদ চৌধুরী উলানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর চাকুরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানীর বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমীতে দীর্ঘকাল চাকুরীর পর তিনি এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর পদচারণা। কবিতা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী ইত্যাদি রচনা করেছেন। কিছু অনুবাদকর্মও তিনি সম্পাদন করেছেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রচিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

আসাদ চৌধুরীর প্রথম কবিতাবই ‘তবক দেওয়া পান’ (১৯৭৫)। এ ছাড়াও রয়েছে- কাব্য : বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬), প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬), জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২), যে পারে পারুক (১৯৮৩), মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪), মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫), আমার কবিতা (১৯৮৫), ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫), প্রেমের কবিতা (১৯৮৫), দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭), নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২), টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭), বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮), বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮), কবিতা-সমগ্র (২০০২), কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩), ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬) ইত্যাদি।

পুরস্কার ও সম্মাননাঃ আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৭), শম্ভুগঞ্জ এনায়েতপুরী স্বর্ণপদক (১৯৯৯), বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক, অশ্বিনী কুমার পদক (২০০১), জীবনানন্দ দাশ পদক, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৬), বঙ্গবন্ধু সম্মাননা ১৪১৮, একুশে পদক, (২০১৩)।

-শাহ মতিন টিপু

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts