দুই দিন আগেও এই ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে নাস্তানাবুদ হয়েছে নিউজিল্যান্ডের কাছে। সেই জ্বালায় পুড়ছে লিভিং স্টোন, মার্ক উড, টপলি, জো রুট, আদিল রশিদ, জস বাটলাররা। তারা ঘরের ট্রফি ঘরে রাখতে ভারতে বিশ্বকাপের মঞ্চে এসেছে লড়াই করতে।
সেই দলটা এক ম্যাচ হেরে পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে পেয়ে ছিড়ে টুকরো করতে চাইবে সেটাই তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশের কাজ হবে এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের দলের কাছ থেকে শক্তি সঞ্চয় করা। কিন্তু ইংলিশ পরীক্ষায় লেটার মার্ক তো দূরের কথা পাস মার্কও তুলতে পারেনি বাংলাদেশ।
ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং কোনো ক্ষেত্রেই ভালো করেনি বাংলাদেশ। ইংলিশদের খেলায় পেস বোলিংয়েও যেন ব্যাকরণে ভুল করছিল। লাইন লেন্থ রাখতে পারছিল না শুরুতে, পেস বোলিংয়ে এমনকি স্পিনেও। সেই সুযোগে রানের পাহাড় গড়ে তুলল ইংল্যান্ড।
ভারতের হিমাচল প্রদেশে ধর্মশালার মাঠে ইংল্যান্ড ১৩৭ রানে বাংলাদেশকে হারিয়েছে। ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬৪ রান তোলে জস বাটলারের ইংল্যান্ড। রানের পাহাড় গড়েছিল ইংলিশরা। জবাবে লড়াই করতে নেমে সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ ২২৭ রানে সবাই ড্রেসিং রুমে আসে। এই বাংলাদেশকে আশা করেনি দেশের কোটি কোটি দর্শক। আফগানিস্তানকে হারিয়ে ভালো অবস্থানে গেলেও ইংল্যান্ডের কাছে সেটা নষ্ট হয়ে গেল।
সাকিব বলছিলেন, ‘আমরা ১০ ওভারেই ৪ উইকেট হারিয়েছি। এতো দ্রুত উইকেট হারালে ৩৫০ রানের পেছনে ছোটা সম্ভব না।’ সাকিব আক্ষেপ করলেন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায়। বললেন, ‘আমরা যখন বল করছিলাম তখন প্রথম ৬ ওভার বল সুইং করছিল। তখনই ম্যাচ ইংল্যান্ডের হাতে চলে যায়। ৩২০ বা ৩৩০ হলেও না হয় একটা চান্স ছিল।’
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কেন টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন। আগের ম্যাচে এই মাঠেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন সাকিব। প্রতিপক্ষকে বেধে নিতে আফগানদের ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন। ম্যাচও জিতেছিলেন ৬ উইকেটে। কিন্তু সব সময় যে একই হবে তা-ও তো ঠিক না। পাশের পিচে খেলা হলেও কি পিচের একই আচরণ থাকবে ? আগের রাতে ধর্মশালায় বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ গুম গুম করে বিজলি চমকেছে। আশঙ্কা ছিল বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচটাই আদৌ হবে কিনা। সকালের ঝকঝকে রোদ খেলার শুরুর পথ খুলে দিয়েছে।
টস ভাগ্য বাংলাদেশকে জিতিয়েছে। কিন্তু সাকিবের ফিল্ডিং করার ভুল সিদ্ধান্তটাই কি ইংলিশদের শাপে বর হলো। এই পিচে যে কোনো দলই ৩০০ রান করবে। কিন্তু সাকিব কি ধরে নিয়েছিলেন বোলিংয়ে ইংলিশদের বেঁধে ফেলবেন। পেস বোলিং এটাকে তাসকিন শুরু করলেন, কিন্তু সঠিক জায়গায় বল রাখতে পারেননি। ভারতের আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে তারা কি আর ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে নষ্ট করতে চাইবে। ধুন্ধুমার ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখাল তারা। মালান সেঞ্চুরি করলেন, ১৪০ রান করে ফেললেন, জো রুট করলেন ৮২, জনি বেয়ারস্টো ৫২ রান করেন। বোলিংয়ে শত ধাক্কায় ইংলিশকে কাঁপানো যাচ্ছিল না। ১১৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড, দ্বিতীয় উইকেট হারায় ২৬৬ রানে, তৃতীয় উইকেটে ২৯৬।
এরপর উইকেট পড়তে শুরু করে। বল ভালো হলেও ততক্ষণে রানের পাহাড়ে উঠে যায় ইংল্যান্ড। এই যখন অবস্থা তখন একটা দল তিন বিভাগেই যদি সুবিধা করতে না পারে, সেই দলটার যুদ্ধে পরাজয় ছাড়া আর কি-ই বা হতে পারে। তাসকিন মেনেই নিয়েছেন এই কন্ডিশনে তার বোলিংটা আরো ভালো হওয়া উচিত ছিল। বৃষ্টি হয়েছিল আউট ফিল্ড নরম। এটা বললে বাঁচার জন্য বলা হবে। অজুহাত দিয়ে লাভ নেই।’
কোচ হাথুরুসিংহে সরাসরি তার বোলারদের দোষ দিয়ে বলেছেন, বোলাররা স্ট্যাম্পের বাইরে বল করেছে। সুইং পিচ দেখেই টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল।
ব্যাটিংয়েও একই চিত্র। টপ অর্ডার কোনো ভাবেই ইংলিশ বোলারদের ঝড় সামাল দিতে পারলেন না। তানজিদ, শান্ত উইকেট তুলে দিয়ে এলেন। ঝড় সামাল দিতে অধিনায়ক সাকিব নামলেন দুর্ভাগ্য বাংলার ক্রিকেটের পোস্টার বয়ের। তিনিও ৯ বল খেলে ১ রান করে ঘরে ফিরলেন। সাকিব হাসলে বাংলাদেশ হাসবে এমনটাই বিশ্বাস করেন কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্ত। সেই সাকিব যখন ফিরে এলেন তখন আশা থাকে কোথায়। ইংলিশ পেসার টাপলি ৪ উইকেট নিয়েছে মাত্র ৪৩ রান দিয়ে। মুশফিকুর রহিম ৫১, আর রানে ফেরা লিটন দাস করলেন ৭৬ । ৬৬ বলে ৭৬ রান লিটনকে আত্মবিশ্বাস দেবে।
সাকিবের শেষ কথা হচ্ছে এটা লম্বা টুর্নামেন্ট। এখনই হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না।’