পূজামণ্ডপ যেনো ডাক ভবন

শিরিন সুলতানা কেয়া : রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ডাকবাক্সের মতো দাঁড়িয়ে আছে লাল টুকটুকে ১৪তলা এক ভবন। এটি ডাক বিভাগের সদর দপ্তর- ডাক ভবন। সেই ডাক ভবনের আদলে এবার দুর্গাপূজার মণ্ডপ সাজিয়েছে রাজশাহীর টাইগার সংঘ। শহরের প্রাণকেন্দ্র রানীবাজারের এই মণ্ডপ সবার দৃষ্টি কাড়ছে।

টাইগার গত ৮ বছর ধরে ব্যতিক্রমীভাবে মণ্ডপ সাজিয়ে আসছে। মণ্ডপের থিম হিসেবে বেছে নেওয়া হয় বছরের আলোচিত ঘটনা বা বিষয়। তাই দুর্গোৎসবে রাজশাহীর এই মণ্ডপটি থাকে অন্যতম আকর্ষণ। শুধু মণ্ডপটি দেখতেই ভিড় করেন অনেকে। এবার মণ্ডপ সাজানো হয়েছে ডাক অধিদপ্তরের সদর দপ্তর ডাক ভবনের ভবনের আদলে। ডাক বিভাগের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এবার এই থিম বেছে নেওয়া হয়েছে, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোববার (২২ অক্টোবর) সকালে মণ্ডপটিতে গিয়ে দেখা যায়, কাঠ, বাঁশ, ফোম আর লাল কাপড় দিয়ে বহুতল ডাক ভবনের আদলে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। ভবনটির সামনে রাখা হয়েছে ডাক বিভাগের একটি লোগো। ভবনের সামনে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচ্চতায় রাখা হয়েছে একজন ডাকহরকরার ভাস্কর্য। দেখে মনে হচ্ছে, এক হাতে হারিকেন আর অন্য হাতে লাঠির সঙ্গে বাঁধা চিঠির বস্তা কাঁধে নিয়ে ছুটছেন ডাকহরকরা। ভাস্কর্যটি দেখে মনে পড়বে পুরনো দিনের স্মৃতি।

মণ্ডপের ভেতরে ইতোমধ্যে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছেন ভক্তরা। বাইরে বিভিন্ন অংশে রাখা হয়েছে কাঠের তৈরি ডাকবাক্স। আর দুই পাশে বড় বড় ফ্রেমে প্রিন্ট করে রাখা হয়েছে ডাকটিকিটের ছবি। সেখানে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ছাপানো প্রায় সব ডাকটিকিট স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস উপলক্ষে প্রকাশ করা স্মারক ডাকটিকিটও স্থান পেয়েছে সেখানে।

মণ্ডপের আরেকটু সামনে প্রিন্ট করে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি চিঠি। এরমধ্যে একটি চিঠি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে লেখা। ঢাকায় বসে ১৯৬৯ সালের ১৩ জুন বঙ্গবন্ধু এই চিঠি লিখেছিলেন তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনাকে ‘হাসু মনি’ লিখে তিনি চিঠি শুরু করেছিলেন। শেষে লিখেছিলেন ‘তোমার আব্বা’। এছাড়া এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত আরও কয়েকজন ব্যক্তির নিজ হাতে লেখা চিঠি স্থান পেয়েছে।

টাইগার সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ পাল চৌধুরী বললেন, ‘প্রতিবছরই আমরা অনুদান সংগ্রহ করে ব্যতিক্রমী থিমে মণ্ডপ সাজাই। এবারও বড় অংকের একটা অর্থ খরচ করে এটা করা হয়েছে। একসময় মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ডাক বিভাগ। মোবাইল, ইন্টারনেট আর কুরিয়ার সার্ভিসের কারণে ডাক বিভাগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। ডাকহরকরা আর দেখা যায় না। নতুন প্রজন্ম তাকে চেনে না। তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এবার ডাক ভবন, ডাকবাক্স, ডাকহরকরা আর চিঠিকে সামনে আনা হয়েছে।’

রাজশাহীতে ১৯৮২ সালে টাইগার সংঘ পূজামণ্ডপের যাত্রা শুরু হয়। এরমধ্যে তিনবার মণ্ডপের জায়গা বদল হয়েছে। রানীবাজারে থিম নিয়ে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে ২০১৬ সাল থেকে। সেবার বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘের মুখের আদলে মণ্ডপটি সাজানো হয়। এরপর ২০১৭ সালে বাহুবলী সিনেমা, ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, ২০১৯ সালে কিংবদন্তি গায়ক আইয়ুব বাচ্চুর রুপালি গিটার, ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস এবং গতবছর ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফিকে থিম হিসেবে বেছে নিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়। ২০২১ সালে কোন থিম ছিল না।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts