স্বাধীনতা তুমি/শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক/স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।/স্বাধীনতা তুমি/উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।/স্বাধীনতা তুমি/বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।/স্বাধীনতা তুমি/ বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান-এর ৯৫তম জন্মদিন আজ। কবির জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরনো ঢাকার মাহুতটুলিতে। পৈতৃক ভিটা নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রাম। ১৩ জন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৪র্থ। ১৯৪৫ সালে পুরনো ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে পাস কোর্সে বিএ পাশ করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।
শামসুর রাহমানকে বলা হয় কবিতার বরপুত্র। তিনি ছিলেন জনতার কবি। তার কবিতায় বাঙালিজাতির স্বাধীনতা প্রাপ্তির চেতনার দীপ্তস্বর উচ্চারিত। তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। যা আজো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।
শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। এর পর ষাট দশকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে ‘রুদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে বসতি’, ‘নিজ বাসভূমে’। দেশ স্বাধীনের পর প্রকাশ পায় ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘মাতাল ঋতিক’সহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবির ৬০টি কবিতার বই। এ ছাড়া শিশুতোষ, গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস- ‘অক্টোপাস’ ও ‘অদ্ভুত আঁধার’, নাটক ও কবিতাগ্রসহ অনুবাদগ্রন্থ, নির্বাচিত কলাম, নির্বাচিত কবিতার চারখন্ডসহ কবির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।
সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, একুশের পদক, কলকাতা থেকে আনন্দ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।
পেশায় তিনি সাংবাদিক ছিলেন। দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ সহসম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক-এর দায়িত্বও পালন করেন।
২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। কবির ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে, নিজ মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
-শাহ মতিন টিপু