অসাধারণ ১১১, থ্যাংক ইউ মাহমুদউল্লাহ

অসাধারণ ব্যাটিং, থ্যাংক ইউ মাহমুদউল্লাহ। থ্যাংক ইউ। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিশ্চিত বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। একেবারে বাঘের মতো খেললেন। ভয়-ডরহীনভাবে চালালেন তার ব্যাট।

দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৮২ রানের জবাবে বাংলার অন্য ব্যাটাররা যখন খাবিখাচ্ছে। উইকেট পতনের মিছিল, তখন ঝড়ের মুখে হাল ধরলেন মাহমুদউল্লাহ। ১০৪ বলে সেঞ্চুরি করলেন। দলকে নিয়ে গেলেন ২১৪ রানের স্কোর। ৬ উইকেট চলে গেছে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে সঙ্গ দিচ্ছিলেন মুস্তাফিজ।

মাহমুদউল্লাহ একাই লড়াই করছিলেন। ৪৪তম ওভারে রাভাদার বলে এক রান নিয়ে সেঞ্চুরি করলেন। একরাশ হতাশার মধ্যেও দেশের মানুষ যেন ক্ষাণিকটা আনন্দ পেল। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমের মানুষের মুখে অনেক দিন পর হাসি দেখা গেল।

মাহমুদউল্লাহ দৌড়ে শূন্যে ভাসলেন। মাঠ থেকে ইশারা দিয়ে বুঝালেন ‘এটা আমি না। যা কিছু হয়েছে সৃষ্টিকর্তার জন্য।’ এরপর হেলমেট, গ্লাভস খুলে, ব্যাট মাঠে রেখে সেজদা দিলেন। শুকরিয়া করলেন। এই ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপে নেবে কি নেবে না তা নিয়ে হাজারো মতবিরোধ ছিল বিসিবিতে। সেই অবহেলার জবাব দিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ক্যাচ দিয়ে। ১১১ বলে ১১১ রান করে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি এনে দিলেন মাহমদুউল্লাহ। বিশ্বকাপে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি।

ড্রেসিং রুমে ফেরার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। ড্রেসিং রুমে ফিরলে খেলোয়াড় কর্মকর্তারা সবাই দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানান, বাহবা দেন। মাহমুদউল্লার পিঠ চাপড়ে দেন অধিনায়ক সাকিব।  দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৪৯ রানে হারল বাংলাদেশ। ২০ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

ভারতের মুম্বাইয়ে ওয়াংখেড়ের পিচে টস হেরে বাংলাদেশ গেল ফিল্ডিংয়ে, ব্যাট হাতে নামল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাণ্ডব চালিয়েছে প্রোটিয়ারা। টিভির পর্দার দর্শক ফিসফিসানি, আজ (দক্ষিণ আফ্রিকা) কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে। থেমেছে, ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রানে।

বাংলাদেশ টস জয়ের অপেক্ষায় ছিল। জিতলে ব্যাট করবেন সাকিবরা। টস জয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। তারা ব্যাট নিয়েছে। বড় স্কোর করার টার্গেট করে। রানের পাহাড় গড়ে তোলে। দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং ডুবিয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

৩৮৩ রানের জবাবে খেলতে নেমে মুড়িমুড়কির মতো উইকেট পড়তে থাকে। ৩০ রানে ২ উইকেট হারায়। তানজিদ হাসান তামিম ১২ রানে ও নামজুল হাসান শান্ত শূন্য রানে বিদায় নেন। লিটন দাস ২২, সাকিব ১, মুশফিকুর রহিম ৮, মেহেদী হাসান মিরাজ ১১ রান করেন। সবার আশা-যাওয়ার মধ্যেও ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যাকে বিসিবি পাত্তাই দেয়নি। সেই রিয়াদ কাল ষষ্ঠ উইকেটে নেমে বাংলাদেশের ব্যাট হাতে একাই লড়েছেন। তার লক্ষ্য ছিল হারের ব্যবধান যতটা কমানো যায়।

এক ডি ককের কাছেই যেন হেরে গেছে বাংলাদেশ। ১৪০ বলে ১৭৪ রান করেছেন তিনি। চলতি বিশ্বকাপে তৃতীয় সেঞ্চুরিটা নিজের নামে লিখলেন। ৭টা ওভার বাউন্ডারি এবং ১৫টা বাউন্ডারি। কী তাণ্ডবই না চালিয়েছেন ডি কক। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে উইকেট কিপারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ৩০ বছর বয়সি এই ব্যাটার ওপেনিংয়ে নেমে ৩০৯ রান হওয়ার পর চার নম্বর উইকেটে বিদায় নেন। হাসানের বলে আউট হন ডি কক। তার সঙ্গে ক্লাসেনের ৪৯ বলে ৯০ রান করে আউট হন। ক্লাসেন ৮টা ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। বাংলার বোলারদের তুলোধোনা করেছেন আফ্রিকার ব্যাটাররা। মেহেদী মিরাজ, হাসান মাহমুদ, শরিফুল, নাসুম, মুস্তাফিজ, সাকিব আল হাসান সবাই বল করতে করতে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দিয়েও বল করিয়ে ছিলেন সাকিব। কিন্তু প্রোটিয়াদের রানের ফোয়ারা থামাতে পারছিলেন না।  বিশ্বকাপে কুইন্টন ডি কক, রিজা হেনড্রিকস, রসি ফন ডার ডুসেন, এইডেন মার্করাম, হেনরিখ ক্লাসেন ও মার্কো জানসেনরা অনেক ভালো ভালো বোলারের বুকে কাঁপন ধরিয়েছেন। তাদের বল মুড়িমুড়কির মতো উড়িয়ে মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলেছেন। অনেক বাঘা বাঘা বোলার এবার প্রোটিয়া ব্যাটারদের ভয়ংকর রূপ দেখেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts