জাহিদুল হক চন্দন: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় বাড়ছে আখের আবাদ। অল্প পরিশ্রমে লাভ বেশি হওয়ায় আখ চাষে ঝুঁকছেন অনেকেই। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এসব আখ চলে যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।
এবার এ উপজেলার ৬শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। এসব আখের বাজারদর প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার।
সিংগাইর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভালো মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সিংগাইরের আখের আকার ও মান ভালো। চলতি মৌসুমে উপজেলার বায়রা, আজিমপুর, বিনোদপুর, তালেবপুর, জামশা, ধল্লা এলাকায় সাড়ে ৬শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে অমৃত, বোম্বাই, রঙবিলাশ ও দেশি জাতের আখের আবাদ হয়েছে।
প্রতি বিঘায় ক্ষেত্র বিশেষে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। চাহিদা থাকায় পাইকাররা ক্ষেত থেকেই কেনেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত এসব আখ পার্শ্ববর্তী সাভার, কেরানীগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ায় আখের আবাদে জড়িয়েছেন স্থানীয় প্রায় আড়াই হাজার কৃষক। আখের সাথে বিভিন্ন সাথী ফসল ফলিয়ে বাড়তি আয় করছেন কৃষকরা।
বায়রা ইউনিয়নের নয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আলকাস। দীর্ঘ ১২ বছর সৌদি আরব থেকে দেশে এসে শুরু করেন আখ চাষ। বিদেশ যাওয়ার আগে আখ চাষের সাথে জড়িত থাকলেও তেমন লাভের মুখ দেখেননি। তবে গত কয়েক বছর ধরে আখের সাথে সাথী ফসল ফলাচ্ছেন তিনি। এ মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে দুই লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার আখ বিক্রি করেছেন।
বায়রা ইউনিয়নের নয়াবাড়ি গ্রামের পিয়ার আহমেদ জানান, ‘আমার পরিবারের সবাই মিলে এবার সাত বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছি। এর মধ্যে চার বিঘা জমিতে বোম্বাই, রঙবিলাশ জাতের আখ বিক্রি করেছি চার লাখ টাকায়। কিন্তু বাকি তিন বিঘাতে দেশি জাতের আখের ফলন তেমন ভালো হয়নি। ওই তিন বিঘার আখ ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে।’
কৃষক মনোয়ার হোসেন জানান, ‘আমাদের বায়রা গ্রাম আখ চাষের জন্য বিখ্যাত। চার-পাঁচ পুরুষ আগে থেকে এখানে আখ চাষ করতেন। এর উপর একসময় আমাদের গ্রাম নির্ভরশীল ছিল। এই বায়রা থেকেই মানিকগঞ্জের অন্যান্য এলাকায় আখ চাষ ছড়িয়ে পড়ে। আগে শুধু জেলায় বিক্রি হলেও এখন সাভারসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়।’
বায়রা গ্রামের কৃষক রহমত মিয়া জানান, ‘নভেম্বর মাসের শেষের দিকে আমরা আবার আখের চারা রোপণ করি। এর সাথে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা করি। সরিষা তোলা হয়ে গেলে তারপর আলু, লালশাক বা ধনিয়ার চাষ করে থাকি। সাথী ফসল চাষ করলে অতিরিক্ত আয় হয় আমাদের। একটা ফসলে লাভ কম হলে অন্য ফসলে তা পুষে যায়।’
পাইকারী ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান জানান, ‘আমি প্রতিবছর এই বায়রা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আখ কিনে নিয়ে তা ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। ঢাকার সাথে এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যাই। আকার ও মানভেদে প্রতিটি আখ ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে আমি কিনি। এছাড়া, ক্ষেত থেকে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে আঁটি বেঁধে গাড়িতে লোড করে দিতে এক হাজার আখের জন্য শ্রমিকদের ১৬শত টাকা দিতে হয়।’
সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী জানান, ‘সিংগাইর উপজেলায় এ মৌসুমে আগের চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। আমরা সব সময় কৃষকদের আখের পাশাপাশি বিভিন্ন সাথী ফসল করতে উদ্বুদ্ধ করছি। বিঘা প্রতি কৃষকরা ৮০ থেকে লাখ টাকার আখ বিক্রি করেছেন। সে হিসাবে সিংগাইর উপজেলা থেকে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার আখ বিক্রি হচ্ছে।’