চা আর পোড়া পাউরুটি বেচে মাসে লাখ টাকা আয়

কাঞ্চন কুমার: জাফরের চায়ের দোকানে ভিড় লেগে আছে। প্রত্যেকেই জাফরের চা আর পোড়ানো পাউরুটির জন্য অপেক্ষা করছেন। চুলার পাশে জাফরকে ঘিরে রেখেছেন ক্রেতারা। দোকানে জাফরের সঙ্গে কাজ করছেন আরেকজন কর্মচারী। চা-পাউরুটি হাতে পেয়ে অনেকে ছবি তুলছেন। অনেকে চায়ে চুমুক দিয়ে প্রশান্তির অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছেন।

জাফর ইসলাম (৩০)। একটি ছোট চায়ের দোকানের মালিক। জাফর ইসলামের বাড়ি কুষ্টিয়া পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের এলাহী পশ্চিমাপাড়া গ্রামে। তার বাবা মৃত খবির উদ্দিনও চায়ের দোকানদার ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে চায়ের দোকানটি তিনি নিজেই চালু করেন। শুরুর দিকে চায়ের দোকান থেকে তেমন একটা আয় হতো না।

ভাগ্য বিতাড়িত যুবক জাফর ইসলাম ভাগ্য ফেরানোর যুদ্ধ শুরু করেন। মানুষের খাবারের প্রতি আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে সফল হওয়ার চিন্তা করেন তিনি। অবশেষে সফল তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাফরের চায়ের দোকানে দলবেঁধে চা খেতে এসেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলাসদরপুর এলাকার হাবিবুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন, ডা. কামাল উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম ও খাইরুল আলম।

ডা. কামাল উদ্দিন বলেন, “নদীর পাশে বসে দুধ চা আর পোড়া পাউরুটি খাওয়ার অনুভুতি আসলে বলে বোঝানো যাবে না। তার চায়ের স্বাদ আর প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই ভালো লাগে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে এখানে চা খেতে এসেছি।”

বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের কাপে আড্ডা দিতে এসেছেন হাবিবুর রহমান। তিনি প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, “এখানে চা খেতে আসা মানুষদের ভিড় বেশি। প্রায় এক ঘণ্টা আগে সিরিয়াল দিয়েও চা হাতে পাচ্ছি না। আগে মানুষের মুখে এই চায়ের স্বাদের কথা শুনেছি। এবার নিজেই এলাম। আগামিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসবো।”

জাফর ইসলাম বলেন, তার জন্মেরও আগে থেকে তার বাবা বাড়ির সামনে ছোট একটি দোকানে চা বিক্রি করতেন। অভাব অনটনের সংসারে তিনি চতুর্থ শ্রেণির পরে আর পড়ালেখা করতে পারেননি। ২০১০ সালের পহেলা জানুয়ারি তার বাবা মারা যান। এর দুইমাস পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তে বাবার চায়ের দোকানের হাল ধরেন তিনি।

জাফর বলেন, ২০১৩ সালে অল্প-অল্প করে দুধ চা বিক্রি শুরু করি। সেই সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুই হাজার টাকার মতো বিক্রি হতো। প্রতিদিন ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা লাভ হতো। ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ির সামনেই চা বিক্রি করতাম। এরপর লাহিনী জিকে ক্যানাল পাড়ে এই চায়ের দোকান দিয়েছি। এই চায়ের দোকানই আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে।

চা বিক্রি করে এখন তার মাসিক আয় লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। অথচ এক সময় সংসার চালানোর দুশ্চিন্তায় দিন কাটতো তার।

জানা গেছে, চিনি দিয়ে পাউরুটি পুড়িয়ে চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করেন তিনি। তার এই খাবারের পদটি এত জনপ্রিয় হয়েছে যে, তার সেই খাবারের স্বাদ নিতে ভোজন রসিকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেও রাজি। জাফর প্রতি কাপ চায়ের দাম রাখেন ২৫ টাকা। উপাদানের তারতম্যে তা ৩০ থেকে ৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়। তার দোকানে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত অব্দি সমান ভিড় লেগে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts