আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন আজ বৃহস্পতিবার। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও আজ শপথ নেবেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে দল ও সরকার পরিচালনায় অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাল ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে টানা চতুর্থ এবং পঞ্চমবারের মতো দলকে জয়ী করে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন তিনি। বিশ্বে কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনন্য নজির ও গৌরবের মুকুটের অধিকারিও হবেন তিনি। নিজের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সাহসী কর্মকাণ্ড দিয়ে আরো আগেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ-সদস্য শেখ হাসিনা-কে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের গাড়ি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। তাদের মধ্যে ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী। আর ১১ জন পাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।
এর আগে গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের অনুমতি চেয়ে দলের পত্র রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। রাষ্ট্রপতি এ সময় তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ব্রিফিংয়ে জানান, সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপ্রধান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ বিজয় জনমতেরই প্রতিফলন। রাষ্ট্রপতি বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে রায় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে, এবং প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি। সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এর আগে বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীও রাষ্ট্রপ্রধান ও তাঁর পত্নীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিবসহ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণও উপস্থিত ছিলেন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শেখ হাসিনার এটাই প্রথম সাক্ষাত্। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সর্বশেষ বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ তিনিই পড়াবেন।