রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ এর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন মাছ আহরিত হয়েছে। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যা এখানে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড। হ্রদে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণে শৃঙ্খলা, শতভাগ শুল্ক আদায়সহ নানামুখী পদক্ষেপের কারণে এ সফলতা এসেছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)।
বিএফডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্মচারী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও জেলেদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ড্রেস কোড চালু, টহল টিমের জন্য ট্র্যাকিং ডিভাইস সিস্টেম চালুসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া মাছ শিকারের সময় ২৪ ঘণ্টা থেকে ১২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়। অর্ধেক সময় পেলেও হ্রদ এলাকায় নিবন্ধিত ২৬ হাজার ৭৯১ জেলে রেকর্ড পরিমাণ মাছ আহরণ করেছেন।
২০২৩ সালে কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন এবং কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত মাছ শিকার ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। হ্রদে পানি না বাড়ায় দুই দফা নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ১ সেপ্টেম্বর থেকে হ্রদে মাছ শিকার শুরু হয়। কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত মিঠা পানির মাছের মধ্যে রয়েছে- কাচকি, চাপিলা ও রুই জাতীয় মাছ। এসব মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য ব্যবসায়ী খোকন বড়ুয়া বলেন, এই হ্রদটি হচ্ছে প্রকৃতির উপর নির্ভর। এখানে পর্যাপ্ত পানি থাকলে মাছের উৎপাদন খুব ভালো হয়।
তিনি বলেন, লেকে বিগত বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় মাছের উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়েছে।
রাঙামাটি ফিসারি ঘাটের শ্রমিক পিন্টু বলেন, অন্যান্যবার লেকে পানি কম থাকায় অবতরণ ঘাটে মাছ কম এসেছে এবার পানি বৃদ্ধির ফলে মাছ যেমন এসেছে তেমনি আমরা শ্রমিকদেরও ভাল আয় হচ্ছে।
রাঙামাটির মাছ ব্যবসায়ী মনি ত্রিপুরা বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি যদি সবসময় থাকে তাহলে লেকে মাছ উৎপাদনও ভালো হবে। এতে করে ব্যবসায়ীদের আয়-রোজগার বাড়বে।
রাঙামাটির ফিসারী ঘাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছ ব্যবসায়ী বুলবুল হোসেন জানান, ঋতু পরিবর্তনের কারণে বিগত বছরগুলোতে লেক থেকে মাছ উৎপাদন কম হয়েছিলো। কিন্তু এবার ২০ দিন অতিরিক্ত সময়ে মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকার ফলে লেকে মাছ যেমন বড় হয়েছে এবং উৎপাদনও ভালো হয়েছে। এতে করে বিএফডিসি এবং ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছে।
রাঙামাটি মাছ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, মৎস্য আহরণে শৃঙ্খলা ফিরে আসায় ব্যবসায়ী এবং জেলেদের মধ্যে সমন্বয় ফিরে এসেছে। আহরণের সময় সীমা কমানো হলেও ব্যবসা ভাল হচ্ছে বলে জানান তারা।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, হ্রদে মাছের উৎপাদন ও আহরণ প্রতি বছর কম ছিলো। এজন্য হ্রদ-সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে শৃঙ্খলায় আনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের জন্য কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। এতে ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়। এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ থেকে বিপুল পরিমাণ শুল্ক আয় করেন সরকার।