১৪৪ রানের মাঝারি মানের টার্গেট তাড়ায় রীতিমতো ঝড় তুললেন নাঈম শেখ। তাকে যোগ্য দিলেন লঙ্কান ব্যাটার দানুশকা গুনাথিলাকা। দুই ওপেনারের শতরানের জুটিতে ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। তবে শেষ দিকে মুস্তাফিজদের দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের লাগাম টানার চেষ্টায় ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
১০১ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর আর ৪০ রান যোগ করতেই আরও চার উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় ঢাকা। নাঈমদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে যেখানে একটা সময় মনে হচ্ছিল বড় ব্যবধানেই জিততে চলেছে ঢাকা, তবে কুমিল্লার দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচ গড়ায় শেষ ওভার পর্যন্ত। যদিও লো স্কোরিং ম্যাচটিতে শেষ হাসি হেসেছে হোম দলই। ৫ উইকেটের জয়ে আসরে শুভ সূচনা পেয়েছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ঢাকা।
এর আগে অনেকটা ম্যাড়ম্যাড়ে মেজাজেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচ। এমন আমেজহীন মঞ্চে রোমাঞ্চ এনে দেন দুর্দান্ত ঢাকার পেসার শরিফুল ইসলাম। কুমিল্লার ইনিংসের শেষ ওভারে আক্রমণে এসেই হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েন তিনি। শরিফুলদের দারুণ বোলিংয়ের দিনে ব্যাট হাতে ১৪৩ রানের বেশি পুঁজি গড়তে পারেনি কুমিল্লা। জবাবে খেলতে নেমে দারুণ ব্যাটিং করেছেন ঢাকার দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও দানুশকা গুনাথিলাকা। তিন চার ও তিন ছক্কার মারে ৪০ বলে ৫২ রান করেন নাঈম। এ ছাড়া ৪২ বলে ৪১ রান করেছেন গুনাথিলাকা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই চড়াও হন নাঈম। কুমিল্লার পেসার মুশফিক হাসানের করা ওভারটি থেকে দুই ছক্কা, এক চার ও এক ডাবলসে ১৯ রান তুলে নিয়েছেন ঢাকার এ ওপেনার। কুমিল্লার ব্যাটাররা যেখানে রান তুলতে রীতিমতো সংগ্রাম করেছে, বিপরীতে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মাত্র ৩৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছেন নাঈম। তবে এরপর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তানভীর ইসলামকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। তার আগে দুর্দান্ত ঢাকার জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন।
নাঈমের পর গুনাথিলাকাকেও সাজঘরে পাঠান তানভীর। ১৬তম ওভারে তানভীরের দেখানো পথে হাঁটেন মুস্তাফিজ। পরপর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ঢাকা। শেষের দিকে ইরফান শুক্কুরের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে জয়ের দেখা পায় ঢাকা। কুমিল্লার হয়ে ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন তানভীর ইসলাম। এ ছাড়া ৩ দশমিক ৩ ওভারে ৩১ রান দিয়ে দুটি উইকেট তুলে নিয়েছেন ফিজ।
এদিন টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ঢাকার অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মিরপুরের পিচে ঘাস দেখে যে তার এমন সিদ্ধান্ত বলেছিলেন নিজেই। সময় যত গড়িয়েছে মিরপুরের পিচ সেই আগের মতই আচরণ করেছে। ইমরুল কায়েসের জায়গায় চলতি আসরে নেতৃত্ব পাওয়া লিটন দাস ওপেনিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ভুগছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে মুক্তি দেন লঙ্কান চতুরঙ্গা ডি সিলভা। নাঈম শেখের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেন ১৬ বলে ১ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ১৩ রান। লিটনের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও ইমরুল। দুজনের ১০৭ রানের জুটিতে শক্ত ভিত পায় কুমিল্লা।
শেষ পর্যন্ত হৃদয় ফিফটি মিসের (৪১ বলে ৪৭ রান) হতাশা নিয়ে ফিরলেও চলতি আসরের প্রথম ফিফটি হাঁকিয়েছেন ইমরুল কায়েস। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে কুমিল্লাকে টেনে নিয়ে গেছেন তিনি। তাসকিন আহমেদের বলে শরীফুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৫৬ বলে করেছেন ৬৬ রান।
অবশ্য আরও আগেই ফিরতে পারতেন ইমরুল। অষ্টম ওভারে পাকিস্তানের স্পিনার উসমান কাদিরের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দিয়েছিলেন এই ওপেনার। সেই ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি ঢাকার অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন।
কুমিল্লার ইনিংসের ২০ তম ওভারে আসরের প্রথম হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েন দুর্দান্ত ঢাকার পেসার শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলটি ছিল ডট। পরের দুই বলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পাকিস্তানি ব্যাটার খুশদিল শাহ মারলেন দুই ছক্কা। শরীফুলের ওভারটি তখন ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছুটা খরুচেই। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হ্যাটট্রিকের স্বাদ নেন শরিফুল! একে একে ফিরিয়েছেন খুশদিল শাহ, রোস্টন চেজ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে। ঢাকার হয়ে শরিফুল তিনটি ও তাসকিন দুটি করে উইকেট শিকার করেন।