হবিগঞ্জের চাষিরা সূর্যমুখীর আবাদে সফল

দ্বিমুড়া গ্রামে সূর্যমুখী ক্ষেতে কৃষক দিদার হোসেনের সাথে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের দ্বিমুড়া গ্রামে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষক মো. দিদার হোসেন। আকর্ষনীয় হওয়ায় তার চাষকৃত সূর্যমুখীর ফুল দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। তিনি সূর্যমুখীর আবাদে সফল।

একই ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে কৃষক আজিজুর রহমান, জসিম উদ্দিন, ইউনুছ মিয়া, দুলাল মিয়া, আমির আলী, আরফান আলী, ওয়াহিদ মিয়াসহ আরও কয়েকজন কৃষক সূর্যমুখীর চাষ করে লাভবান। তাদের সাফল্য দেখে অন্যান্য স্থানের কৃষকরাও সূর্যমুখীর চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

একইভাবে জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, লাখাই, হবিগঞ্জ, মাধবপুর, চুনারুঘাট উপজেলার গ্রামে গ্রামে কৃষকরা সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। তারাও আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন।

হবিগঞ্জ জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে জেলাজুড়ে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন ৩ হাজার কৃষক। যেখানে এক সময় জেলায় শখের বসে কেউ কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় সূর্যমুখী গাছ রোপণ করে সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। আর্থিকভাবেও লাভবান হতেন না। এখানে বর্তমানে কৃষি বিভাগের তৎপরতায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ বেড়ে চলেছে। তাতে লাভবান কৃষকরা। সখ পূরণের পাশিপাশি আসছে অর্থ।

কৃষক দিদার হোসেন বলেন, সূর্যমুখীর চাষ সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলনা। বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম মাঠে এসে পরামর্শ প্রদান করেন। আমি উৎসাহিত হয়ে জমি আবাদ করে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ক্ষেতে আছে হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুল। যে দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মন কেড়ে নিচ্ছে। যাই হোক চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। আগামীতেও চাষ করার ইচ্ছা আছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, এ ব্লকের মধ্যে প্রায় ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ২০ জন কৃষককে জনপ্রতি ২ কেজি বীজ ও ২০ কেজি করে সার সরকারিভাবে প্রদান করা হয়েছে। সরকারি সার ও বীজ দিয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়। যার ফলে কৃষকরা ফুলের চাষ করে লাভবান। কৃষকদের মুখে হাসি দেখতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দ লাগছে।

বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, ২০২২-২৩ সালে প্রণোদনার মাধ্যমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। এখানে ১৭০ জন কৃষকের মধ্যে জনপ্রতি ২ কেজি করে বীজ ও ২০ কেজি করে সার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও কৃষকদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে সহজে উন্নতমানের তেল ও খৈল উৎপাদন হয়। পাশাপাশি পুষ্টিকর সবজি হিসেবেও সূর্যমুখী জনপ্রিয়। তাছাড়া এই ফুলের মাধ্যমে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করা সম্ভব। স্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগ জীবাণু প্রতিরোধে এই ফুল থেকে উৎপাদিত তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, জেলাজুড়ে এক সময় সূর্যমুখীর চাষ হতো সখের বসে। উদ্যোগ নিয়ে উপ সহকারী কৃষি অফিসারদের গ্রামে গ্রামে পাঠাই। তারা কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছে। সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে বীজ ও সার। কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে সূর্যমুখীর ব্যাপক আবাদ করে সফল।

তিনি বলেন, এক দশক আগেও সূর্যমুখী তেলের বোতল দেখা যেতো সুপারশপ আর অভিজাত দোকানের তাকে। শহরের অভিজাত শ্রেণি ছিল এই তেলের মূল গ্রাহক। এখন বাড়ির পাশের দোকানের তাকেও ঠাঁই পাচ্ছে এই তেল। স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে অভিজাত শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে রান্নার তালিকায় রাখছেন এই তেল। প্রচলিত তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় পুষ্টিবিদদের এমন পরামর্শে রান্নার তেল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। নতুন নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়ে বেড়ে যাচ্ছে এই তেলের চাহিদা।

-মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ

 

 

Print Friendly

Related Posts