বিএমডিসির দ্বৈত নীতি ও প্রশাসনের উদাসীনতা

উত্তম কুমার

যদিও শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কেবলই সনদ অর্জন নয় কিন্তু আজকের সময়ে এটি যেন নির্মম বাস্তবতা।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ হতে পাশের পেশাগত সনদ থাকার পরও নেই পেশাদারিত্বের স্বীকৃতি। দেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্য জনবলের কাঠামোই যেখানে পুরোপুরি সন্তোষজনক নয় সেখানে সরকারের অর্থ ব্যয় করে তৈরী জনবলকে কাজে না লাগিয়ে বাড়ানো হচ্ছে বেকারত্ব অথচ কোভিড সংক্রমনের শুরু থেকে পুরো পৃথিবীব্যাপি স্বাস্থ্য জনবল সংকট।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত এবং ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধিভুক্ত ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন হেলথ/মেডিকেল টেকনোলজি (ডেন্টাল) কোর্সের পাসকৃত প্রায় ২০০০ গ্রাজুয়েটদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কোনটাই রাখা হয়নি। সনদ থেকেও কর্মেও সুযোগ না থাকায় কর্মক্ষেত্রে এসে দিশাহীন। একটি ছোট্ট সদিচ্ছাই যথেষ্ট ছিল এই ডিগ্রীপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটদেরকে স্বাস্থ্যখাতে কাজে লাগানোর জন্য। সমস্যা নিয়ে একমত অনেকেই কিন্তু সমাধানের দায়িত্বভার নেয়নি কেউই। ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ আদৌতেই কোন কাজে আসছে না। একদিকে নেই দেশে কর্ম-সংস্থানের সুযোগ অপরদিকে বর্হিবিশ্বে যেতে গেলেও পোহাতে হচ্ছে নানাবিধ বাধা। সরকার একদিকে কর্মমুখী শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছেন কিন্তু পেশাগত দক্ষতা থাকার পরও এই জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতির কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

বিএসসি-ডেন্টাল কোর্সটির, কারিকুলামের বিষয় বস্তু ক্লিনিক্যাল ও সম্পূর্ণ প্র্যাকটিস নির্ভর তারপরও সনদধারীদের দেওয়া হয়না প্র্যাকটিসের অনুমোদন। ৪ বছর মেয়াদী ডেন্টাল কোর্সটির ৩ বছর একাডেমিক এবং শেষ ১ বছর ইন কোর্স ট্রেনিং (ইন্টার্নি) এর মাধ্যমে শেষ হয়। ১ বছরের ইনকোর্স ট্রেনিং দেশের সরকারি ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে/মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের বিভাগসমূহে সম্পন্ন হয়।

কোর্সটিতে ভর্তির যোগ্যতা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৩/৪ বছরের ডিপ্লোমা।

এ কোর্সের একজন শিক্ষার্থীকে দন্তচিকিৎসা বিষয়ক ক্লিনিক্যাল বিষয়ে (১৯২০ ঘণ্টা তত্ত্বীয় ও ১৬১০ ঘণ্টা) ব্যবহারিক পড়ানো হয়। এ ছাড়া এক বছর ইনকোর্স ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে এই কোর্সের শিক্ষার্থীরা ডায়াগনসিস, কনজারভেটিভ, সার্জারি, প্রস্থডোন্টিক, অর্থডোন্টিক ও চিলড্রেন ডেন্টিস্ট্রিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি প্রশিক্ষণের সুযোগ পান।

কোর্স টাইটেলের সাথে অযাচিতভাবে জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘টেকনোলজি’ শব্দটি। অথচ এ কোর্সের সিলেবাসে টেকনোলজির বিষয়বস্তু নেই। বাস্তবিক অর্থে বিশ্বে ডেন্টাল টেকনোলজি ডিগ্রীর জন্য যে কারিকুলাম, ল্যাব ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা রয়েছে তা বাংলাদেশে নেই। একজন ডেন্টাল ল্যাবরেটরী টেকনিশিয়ানের পঠিত বিষয় ও কাজ সম্পূর্ণরুপে আলাদা। বাংলাদেশে প্রচলিত বেশিরভাগ ডেন্টাল ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের কোন শর্টকোর্স/সার্টিফিকেট কোর্সও করা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় হতে দন্তচিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী হয়েও শুধুমাত্র বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) তফসিলে কোর্সটি অন্তর্ভূক্ত না করায় যোগ্যতা থাকা সত্বেও পেশাগত চর্চার সুযোগ না পেয়ে সকলেই হতাশায় দিনযাপন করছেন। আশ্চর্যজনকভাবে এতবছর পার হলেও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও এ সকল গ্রাজুয়েটদের ডেন্টাল পেশায় এখন পর্যন্ত কোন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। বর্হিবিশ্বে এ সকল প্রশিক্ষিত জনবলের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পেশাগত অনুমোদন অর্থাৎ বিএমডিসির স্বীকৃতি না থাকায় সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে কোর্সটি অনুমোদনের সময় কোর্সটিকে বিএমডিসি’র অধিভূক্তি ও শর্তসমূহ প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। কোর্সটিকে বিএমডিসি’র তফসিলভূক্ত করার সিদ্ধান্ত থাকলেও বিএমডিসি কর্তৃপক্ষ কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সমস্যার শুরু হয়। সমস্যা নিরসনে আন্দেলনে নামেন শিক্ষার্থীরা, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩০.০১.২০১৩ ইং তারিখে দুটি সুপরিশও প্রদান করেন। একটি সুপারিশপত্র বিএমডিসি বরাবর এবং অন্য একটি ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরারবর প্রেরণ করেন। বিএমডিসি বরাবর প্রেরিত পত্রটিতে বিএসসি বিএসসি ইন হেলথ/মেডিকেল টেকনোলজি ডেন্টাল কোর্সটিকে বিএমডিসি কর্তৃক অনুমোদিত করে প্রাইভেট প্র্যাকটিস রেজিস্ট্রেশন প্রদানের সুপারিশ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরিত পত্রে কোর্সটির বিদ্যমান ‘কোর্স টাইটেল’ পরিবর্তন করে “ব্যাচেলর অব ডেন্টিস্ট্রি ” অথবা “বিএসসি ইন ডেন্টিস্ট্রি” করার সুপারিশ করেন।

পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রেরিত সুপারিশসমূহ বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির অন্যায্য চাপে অকারণে ও ব্যাখ্যাহীনভাবে প্রত্যাহার করে নিলে বিএসসি-ডেন্টাল এসোসিয়েশন মহামান্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে একটি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার রায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক সুপারিশদ্বয়কে প্রত্যাহার করাকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং প্রেরিত সুপারিশ দুটিকে বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

বিএমডিসি আইন ২০১০ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষার স্বীকৃতি এবং ৪র্থ তফসিলে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ১৪(২) অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থিত বা বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতার ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা প্রদানকারী কোন প্রতিষ্ঠানের নাম তফসিলে অন্তর্ভূক্ত না থাকলে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে বা উক্ত ডিগ্রী বা ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিকে এ আইনের অধীনে উক্ত যোগ্যতার স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে কাউন্সিলের নিকট আবেদন করতে হবে।

স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে কাউন্সিলের নিকট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধারা ১৪ এর উপধারা ৪ অনুসারে কাউন্সিল আবেদনকারীদের কারিকুলাম পর্যালোচনা, নির্ধারিত মানদন্ড যাচাই বাছাই করবে। বিএমডিসি আইনের এসকল নিয়মনীতি অনুসরণ করে বারংবার আবেদনও করা হয় । কিন্তুু কাউন্সিলের নিকট বার বার আবেদন করলেও তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। এমনকি তাদের বিধি মোতাবেক মানদন্ড যাচাই বাছাই এর কথা থাকলেও তারা কোন ভাবেই সেটির বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সর্বশেষ আবেদনের প্রেক্ষিতে মূল বিষয়বস্তুকে পাশ কাটিয়ে অস্পষ্টভাবে ব্যাখা প্রদান করে আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। আবেদনে বিএসসি ডেন্টাল কোর্সটিকে তফসিলভুক্ত করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রতি উত্তরে তারা বিএসসি ডেন্টাল কোর্স টাইটেলে সংযুক্ত টেকনোলোজি শব্দটিকে অপব্যাখা করে ক্লিনিক্যাল কারিকুলামকে টেকনোলজিস্টের তকমা লাগিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায়।

যেখানে বিদ্যমান আইন আইনের ধারা ১৫ অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থিত বা বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত কোন মেডিকেল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত তিন বছরের কম নয় এমন সময়ব্যাপী মেডিকেল চিকিৎসা প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর উক্ত মেডিকেল চিকিৎসা ডিপ্লোমাধারী এ আইনের অধীন কাউন্সিল কর্তৃক নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্য হয়ে থাকে । এবং শুধুমাত্র এসএসসি পাসের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ থেকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিষয়ে ৩/৪ বছর কোর্স সম্পন্ন করে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস রেজিষ্ট্রেশন সনদ প্রাপ্তির মাধ্যমে বৈধভাবে মেডিসিন ও মিডওয়াইফারী প্র্যাকটিস করতে পারেন।
সেখানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ বছর মেয়াদী পেশাগত ডেন্টাল ডিগ্রী অর্জনের পরও বিএমডিসি কর্তৃপক্ষ ডিগ্রীটিকে তফসিলভূক্ত করে নিবন্ধন প্রদান না করে কেবল স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবে বা প্ররোচনায় নানা অজুহাত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ডিগ্রীধারী গ্রাজুয়েটগণকে প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এটি বিএমডিসির দ্বিচারিতা, অবজ্ঞা এবং গোষ্ঠীস্বার্থে তাদের পক্ষপাতী আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়।

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সভাপতি, ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবুল কাশেম তার কয়েকটি সাক্ষাৎকারে বলছেন বিডিএস কোর্সের সিলেবাস এবং বিএসসি ডেন্টাল এর সিলেবাস একই। এ সিলেবাসের কারনেই তাদের আটকানো যাচ্ছে না। মূলত সত্য কখনও মিথ্যা দিয়ে চাপা রাখা যায়নি, যায় না।

দন্তচিকিৎসায় ডিগ্রীধারী হয়েও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করার সময় প্রশাসনিক, পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হবে কেন? এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানানভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয় যা সামাজিক মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে।

বিডিএস ডিগ্রীধারী চিকিৎসকগণ নিঃসন্দেহে মেধায়, যোগ্যতায় আমাদের চেয়ে এগিয়ে তা অনস্বীকার্য কিন্তু আমরা তো অন্যায় কিছু চাচ্ছি না। ডেন্টাল সোসাইটির কাছেও আমাদের দাবী জানাচ্ছি না। আমাদের যৌক্তিক দাবী রাষ্ট্রের কাছে, সরকারের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ, মাঠ প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা থাকার পরও আমাদের দাবীতে ডেন্টাল সোসাইটির গাত্রদাহ হওয়ার কারন কী?

পেশাগত জীবনে আমরা তাদের প্রতিযোগী নই। পেশাগত রাজনীতি টিকিয়ে রাখার ইস্যু হিসেবে নানান অপপ্রচার করে যাচ্ছেন তাঁরা। ডেন্টাল পেশা থেকে কোয়াক নির্ম‚ল হোক সেটি আমরাও চাই কিন্তু,কোয়াক নির্ম‚ল এর ধোঁয়া তুলে বস্তুত একটি সমশিক্ষিত গোষ্ঠীকে কোয়াক বলে অভিহিত করছেন যা অনৈতিক এবং অপরাধ।

বাংলাদেশে ১৮ কোটির বেশি জনগনের জন্য বিএমডিসি সনদধারী দন্তচিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ১১৩৫০জন এর মত। যাদের বেশিরভাগই বিভাগীয় শহর ও রাজধানীতে অবস্থান করেন। বাকিদের একটি বড় অংশ উচ্চশিক্ষায় ও চাকুরীতে দেশ ও বিদেশে অবস্থান করেন। কিছু অংশ জেনারেল ক্যাডারে অংশ নিয়ে পেশা বদলান এবং প্র্যাকটিসের বাইরে থাকেন। এছাড়াও একটি বৃহৎ অংশ বহির্বিশ্বে কর্মসংস্থান, অন্যপেশায় আত্মনিয়োগ, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বাইরে অবস্থান করছেন।

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৬ ভাগ জনগণ যেখানে গ্রামে বসবাস করে সেখানে অধিকাংশ দন্তচিকিৎসকগণ শহরমূখী হওয়ায় গ্রামীন জনগোষ্ঠীর দন্তস্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকের পরিমান খুবই নগন্য। ফলে দেশের গ্রামীন জনগোষ্ঠী তাদের স্পর্শকাতর মুখ ও দন্তচিকিৎসা সেবার জন্য প্রশিক্ষণবিহীন হাতুড়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে বাধ্য হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বছরে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করছেন, যার এক-তৃতীয়াংশই বেকারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে এখন উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএসের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, দেশের উচ্চশিক্ষিতদের ৩৪ শতাংশই বেকার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেকারত্বের নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বেকারত্ব থেকে তরুণদের মধ্যে হতাশা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, সামাজিক মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানো, মাদকাসক্তি, অপরাধ ও সহিংসতার মতো ঘটনার বিস্তার হতে পারে। সংবিধানের ১৭(ক) ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের ধারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন ‘২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৩ কোটি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে’। তাঁর বক্তৃতার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, শুধু চাকুরী নয়, বেকার যুবক যাতে আত্মকর্মে বলিয়ান হয়ে নিজেই তার কর্মের সুযোগ নিতে পারে সে লক্ষ্যে সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও নীতি প্রণয়ন করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় বাস্তবায়নে এবং দক্ষ প্রশিক্ষিত হাজারো বিএসসি-ডেন্টাল ডিগ্রীধারীগণকে তাদের কারিকুলাম ও কর্মপরিধি মোতাবেক আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে অথবা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বিএমডিসি কর্তৃপক্ষ প্রচলিত বিএমডিসি আইনের তফসিলে ডিগ্রীটিকে অর্ন্তভূক্ত করে কারিকুলাম মোতাবেক প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সনদ/লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খুব সহজেই হাজারো শিক্ষিত বেকারের আত্মকর্মসংস্থান তৈরি হবে।

উক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের কোন প্রকার আর্থিক সংশ্লেষ বা বরাদ্দ প্রদানের প্রয়োজন হবে না। উপরন্তু এ সকল ডিগ্রীধারীর নিকট হতে প্রাপ্ত নিবন্ধন ফি, নবায়ন ফি, ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য ফিস সরকারের রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১১, ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ ও এসডিজির-৩ নং অভিষ্ট বাস্তবায়নে যুগোপযোগী শিক্ষা ও দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলকে সঠিক ও সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি। সামগ্রিক বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনান্তে দেখা যায়, দেশের শহরের জনগোষ্ঠীর নাগরিক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সহজলভ্যতার অনূরূপ গ্রামীণ ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর নাগরিক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি সহজতর করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও জরুরী সেবাদান নিশ্চিত করা এবং তা বাস্তবায়নে যে প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে তাতে সুস্পষ্টভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী জনবল খাত ও সংশ্লিষ্ট সকলকে রাষ্ট্রের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিক ও যুগোপযোগী করে প্রশিক্ষিত করা।

স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখ্যযোগ্য উন্নয়ন সত্ত্বেও অনেক চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান। সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যে সেবা প্রাপ্তি এবং সেবা দানের মধ্যে বিশাল পার্থক্য বিরাজমান। আন্তর্জাতিক মানের সাথে তুলনা করলে দেশে স্বাস্থ্য সেক্টরে জনবলের দিক দিয়ে বিপুল ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে সাধারণ জনগণের একটি বিরাট অংশ অজ্ঞ, অদক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন লোকের নিকট জরুরী, অনেক ক্ষেত্রে ক্রটিপূর্ণ সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা-৩ মোতাবেক রাষ্ট্রের সকল বয়সী এবং সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণের যে অভিষ্ট তা বাস্তবায়নে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৬-এ উল্লেখিত (নগর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করবার উদ্দেশ্যে শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে) এবং অনুচ্ছেদ ১৭(খ) (সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে) বিশ্লেষণ করলেও প্রতীয়মান হয় যে, দন্ত স্বাস্থ্যসেবায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলকে সমাজের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রসমুহে নিযুক্ত করা হলে একদিকে যেমন বেকারত্বের গøাণি থেকে মুক্তি পাবে পাশাপাশি রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবায় সামগ্রিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অভূতপূর্ব এবং প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করবে। #

লেখক : মহাসচিব, বিএসসি-ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন।

Print Friendly

Related Posts