শাহ মতিন টিপু : হেমন্ত ঋতুর দৃশ্যচিত্র এ রকম- সারা দিন ধরে হিম মাখানো হালকা হাওয়ায় ঝরঝর করে ঝরে পড়ছে কোটি কোটি গাছের পাতা। হেমন্ত প্রকৃতির বিচিত্র রঙে রঙিন হয়ে ওঠার যেন বিদায় উৎসব। সোনাঝরা রোদ্দুরেও শোকার্ত মানবীর মতো বাতাসের আন্দোলন ঘিরে অবিরাম শব্দ উঠছে বুকফাটা হাহাকারে। সে শোক ছড়িয়ে পড়ছে হাওয়ায়-হাওয়ায়। সে শোক ছড়িয়ে যাচ্ছে ঝরা পাতায়।
এখন ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের পরশ। আশ্বিনী বৃষ্টির পর শীতের আভাস নিয়ে এল হেমন্ত। এল নবান্নের ঋতু। আজ পহেলা কার্তিক। অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ-মাঘ শীতকাল ধরা হলেও হেমন্তেই শীত অনুভূত হওয়া শুরু করে। শীত ভাব, সকাল ও সন্ধ্যায় হালকা কুয়াশা শীতের আগমন বার্তা দিচ্ছে।
হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে হেমন্ত। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। ‘মরা’ কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব ‘নবান্ন’।
একসময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমান-আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ক হয়। হেমন্তে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়।
নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। লাঠিখেলা, বাউল গান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা নিয়ে বসে গ্রাম্য মেলা। যদিও আজকাল সব ঐতিহ্যই হারাতে বসেছি আমরা।