জনপ্রিয় ফুল ডালিয়া

মেটো নিউজ : শীতকালে জনপ্রিয় ফুলগুলির মধ্যে অন্যতম ডালিয়া। এটি বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করা যায়। আবার বাড়ির বাগানে বা ছাদে টবে শখ করে ডালিয়া লাগান অনেকে। মূলত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ডালিয়া ফোটে। এর জন্য নভেম্বরে কচি চারা টব বা মাটিতে লাগাতে হবে। আর নভেম্বর থেকেই ডালিয়া পেতে চাইলে কচি চারা লাগাতে হবে সেপ্টেম্বর মাসে। সেক্ষেত্রে কাটিং করতে হবে আরও আগে, অগস্টে। তবে, যে সময়েই কাটিং করুন, বৃষ্টির জল যেন না পড়ে।

কচি চারা তৈরি

কাটিং-এর মাধ্যমে ডালিয়া বংশবিস্তার করে এবং কচি চারা তৈরি হয়। একটি গাঁটযুক্ত ১০ সেমি লম্বা কচি ডালকে কাটিং করে সেরাডিক্স বি ওয়ান পাওডার লাগিয়ে বালি ও জৈব পদার্থের মিশ্রণের মধ্যে বসাতে হবে। কাটিং লাগানোর ১৫ দিনের মধ্যে তাতে ৩-৪টি পাখির নখের মতো শিকড় গজায়। এই শিকড়যুক্ত কাটিংকে ৭ সেমি ব্যাসার্ধের টবে প্রথমে লাগাতে হবে। তারপর সাত দিন ধরে রোদে রেখে (ধীরে ধীরে) বাইরে লাগানোর উপযুক্ত করে তুলতে হবে। একে কচি চারা বলে। এই সময় পরিচর্যার উপরে ফুল কতটা ভাল হবে তা নির্ভর করে। হাটে-বাজারে বা নার্শারিতে এগুলিই বিক্রি হয়।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে গত বছরে রেখে দেওয়া গাছ বা বাল্ব থেকে উৎপন্ন হওয়া গাছের মাঝামাঝি কেটে দিলে গোড়া থেকে অনেক কচি ডাল বের হয়। এই ডালগুলিকে কাটিং হিসাবে ব্যবহার করলে ভাল ফুল পাওয়া যায়। কিন্তু পুরনো গাছ বা বাল্ব থেকে উৎপন্ন গাছের ডগা থেকে চারা করলে ভাল ফুল পাওয়া যায় না। হাটে বা নার্শারিতে অনেক সময় এই ধরনের চারা বিক্রি হয়। এদিকে একটু সতর্ক থাকতে হবে।

টবে ডালিয়া

টবে ডালিয়া ফোটাতে চাইলে ৯ ইঞ্চি বা ২৪ সেমি ব্যাসার্ধের টবে চারা স্থানান্তর করতে হবে। রোদ পায়, এমন জায়গায় টব রাখতে হবে। কচি চারা লাগানোর এক মাস আগে টবের মাটি তৈরি করে ফেলতে হবে।  দোঁয়াশ মাটি, গোবর সার, পাতা পচা সার ২:২:১ অনুপাতে ভাল ভাবে মিশিয়ে তার সঙ্গে হাড়ের গুঁড়ো দু’মুঠো, ৬ চা চামচ সুপার ফসফেট ও ৩ চা চামচ সালফেট অফ পটাশ মেশাতে হবে। কুড়ি দিন পরে এই মিশ্রণে ২ চা চামচ কলিচুন মেশাতে হবে। এই ভাবে মাটি তৈরি করার পর চারা লাগাতে হবে। ১৫ দিন পরে টবের গা ঘেষে (গাছের গোড়া থেকে ৯ ইঞ্চি দূরে) সর্ষের খোল (৩ ভাগ) ও স্টেরামিল (২ ভাগ) প্রয়োগ করতে হবে। এই মিশ্র সার দেওয়ার ২০ দিন পরে এবং কুঁড়ি এলে স্টেরামিল (১০ ভাগ), সুপার ফসফেট (৩ ভাগ), সালফেট অফ পটাশ (২ ভাগ) মিশিয়ে দিতে হবে। কুঁড়ি একটু বড় হলে ৩-৪ দিন পরপর তরল জৈব সার দিতে হবে। তরল সার খালি কাঁচা গোবর দিয়ে বানানো যায় আবার কাঁচা গোবর, সর্ষে খোল একসঙ্গে পচিয়েও করা যায়। আবার ফিসমিল, ব্লাডমিল, গুয়ানো ও মুরগির সার মিশিয়ে ও তরল জৈব সার বানানো যায়। টবে প্রতিটি গাছে এক থেকে তিনটি ফুল পাওয়া সম্ভব। টবের গাছে কুঁড়ি এলে মাঝের বড় কুঁড়িটি রেখে ছোট কুঁড়ি বা ডাল ভেঙে দিতে হবে। ৩টি ফুল নিতে চাইলে একেবারে নীচের দিকে কচি একজোড়া ডাল রেখে দিতে হবে।

জমিতে ডালিয়া

ডালিয়া চাষের জন্য ৩০-৪৫ সেমি গভীরে করে মাটি কুপিয়ে গুঁড়ো করতে হবে এবং অবাঞ্ছিত পদার্থ যেমন, ইট, পাথরের টুকরো, আগের ফসলের গোড়ার অংশ, ঘাস ইত্যাদি জমি থেকে তুলে ফেলতে হবে। এই মাটির সঙ্গে ১২০ গ্রাম চুন মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর উপরে ১০ সেমি পুরু করে পচানো গোবর সার বিছিয়ে  ভাল ভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এরও পরে দু’মুঠো হাড়ের গুঁড়ো, এক মুঠো সুপার ফসফেট, ৬ চা চামচ সালফেট অফ পটাশ মিশিয়ে নিতে হবে। মাটি তৈরি করার পর জমিতে ১৫ সেমি ব্যাসার্ধের ও ৪০ সেমি গভীরতায় গর্ত খুঁড়তে হবে। এখানেই বসবে ডালিয়া গাছ।

গাছ লাগানোর ১৫ দিন পর থেকে গাছ প্রতি ১ চা চামচ ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট দিতে হবে। কুঁড়ি আসার আগে ১-২ চা চামচ করে উক্ত সার ১৫ দিন পরপর গাছ প্রতি প্রয়োগ করতে হবে। কুঁড়ি ধরলে দু’ চা চামচ করে মিশ্র সার (অ্যামোনিয়াম সালফেট দু’ভাগ, সুপার ফসফেট দু’ভাগ এবং সালফার অফ পটাশ এক ভাগ) দেওয়া যেতে পারে। এই সার গাছের গোড়া থেকে ৯ ইঞ্চি বা এক বিঘাত দূরে ২ সেমি গভীরে দিতে হবে। কুঁড়ি একটু বড় হলে তরল জৈব সার সপ্তাহে এক-দু’বার দেওয়া দরকার। পিএইচ ৬-৬.৫।

জমির গাছ ২৫ সেমির মতো বড় হলে ডালিয়ার অগ্রমুকুল নখ দিয়ে ভেঙে দিতে হবে। এর ফলে অসংখ্য ডাল বেরোবে। তার থেকে ৪টি সতেজ-সবল ডাল রেখে‌ বাকি ডাল ও কুঁড়িগুলোকে ভেঙে দিতে হবে। এর ফলে প্রথম দফায় ৪টি বড়ফুল ও দ্বিতীয় দফায় আরও চারটি, মোট ৮টি ফুল  প্রতি গাছ থেকে পাওয়া যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts