ড. প্রতিভা রানী কর্মকার
George RR Marin-এর মতে ‘A reader lives a thousand lives before he dies. The man who never reads lives only one’।
বই পড়ার অভ্যাস পাঠককে ঋদ্ধ করে। সমাজকে করে অগ্রসর। আজকাল বইয়ের স্বল্পতা না থাকলেও পাঠক স্বল্পতা রয়েছে। এমন একটা সময় একজন মানুষকে নিয়ে লিখছি যিনি বই পড়তে সবচেয়ে ভালোবাসতেন, কিন্তু জীবন যুদ্ধ তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি। তিনি আমার স্বর্গীয় বাবা গৌর চন্দ্র কর্মকার।
বাবাকে দেখতাম, সুযোগ পেলেই আমাদের বাংলা পাঠ্য পুস্তক হাতে নিয়ে পড়তে থাকতেন। বাবার বিশ্রাম মানেই ছিল বই অথবা পত্রিকা পড়া। এছাড়াও বাবা মাঝে মাঝে আমাদের স্কুলে যাদের বই কিনতে অসুবিধা হতো, নীরবে তাদের হাতে বই কেনার অর্থ ও বই পড়ার উৎসাহ দিতেন। এমনটা কেন করতেন জানার আগ্রহ ছিল। একদিন জানতেও পারলাম।
ছোটবেলায় পরিবারের আর্থিক অসুবিধার কারণে আমার বাবা বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। সদ্যকেনা নতুন বই সহপাঠী ও বন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এরপর বাবা আমার অসুস্থ দাদুর পাশে দাঁড়ান । এক প্রজন্মের স্বপ্ন আমরা লালন করি, দেখতে চাই আগামীর মধ্যে। তিনি তাই আমাদের মধ্যে বই পড়ার সেই উৎসাহ দেখে আনন্দ পেতেন।
আজ ৫ ডিসেম্বর বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। বাবার স্মৃতি রক্ষার্থে এ বছর যখন কিছু শিক্ষার্থীদের হাতে বই ও শিক্ষা উপকরণ তুলে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলাম, তখন পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় প্রকাশ করল ২০০৬ সাল থেকে অদ্যাবধি চলমান বইপড়া উৎসব কার্যক্রম ইনোভেটরের প্রতিষ্ঠাতা, আয়োজক ও শিক্ষক প্রণবকান্তি দেব। আজ বাবা নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ ও অভ্যাসগুলো আজও আমাকে নতুন পথের সন্ধান দেয়, শক্তি যোগায় এগিয়ে চলার, বই পড়ার, জানার ও জানানোর।
ড. প্রতিভা রানী কর্মকার : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক।